ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠ ও ড্রেনগুলো যেন মশা উৎপাদনের কারখানা। এগুলোতে প্রতিনিয়ত মশা উৎপাদিত হচ্ছে এবং সেই মশা হাসপাতালের বেডে গিয়ে রোগীদের কামড়াচ্ছে। এতে সুস্থ হতে এসে রোগীরা পক্ষান্তরে অসুস্থ হচ্ছেন। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের জন্য নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ বা পদক্ষেপ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশে টয়লেটের অবস্থা নাজুক। যেন সেখানে এডিস মশা উৎপাদন করা হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতাল ভবনের বহুতল ভবন ঘেঁষে পেছনে বিস্তর জায়গাজুড়ে রয়েছে মাঠ। সেই মাঠে ও ভবনের চিপাচাপায় গজিয়ে উঠেছে কচু গাছ, নানা জাতের আগাছা, গাছগাছালি ও ঘাস। এগুলোর নিচে দীর্ঘদিন ধরে পানি জমে পচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে এবং ওখান থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা ও পোকা-মাকড়। ভবনের দেয়াল ও ছাদেও নানা জাতের আগাছা গজিয়ে উঠেছে। এতে দেয়াল ফেটে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। দেয়াল বেয়ে পানি পড়ছে। এতে আয়ু কমছে ভবনের। পাশাপাশি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স সহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের কোয়ার্টারগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। যা বসবাসের অনুপযোগী।
এখানে প্রায় ২৫টি পরিবার বসবাস করতে পারতেন। এছাড়া টিএইচ এর বাসভবনটির অবস্থা বেহাল। এরপরেও তিনি সেখানে বসবাস করছেন। হাসপাতালের পুরো মাঠটি ঘাস ও আগাছায় ভরপুর। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি অকেজো অ্যাম্বুলেন্স গাছের নিচে পড়ে আছে। পানি ও ময়লা আবর্জনায় এগুলোতে জং ধরে আরও অকেজো ও নষ্ট হচ্ছে।
খারুয়া ইউনিয়নের হালিউড়া থেকে ডেঙ্গুরোগের সেবা নিতে আসা রোগী আরিফুল ইসলাম হাসপাতালের সেবার প্রতি অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে বলেন, যেখানে মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসে রোগমুক্তির জন্য, সেখানেই যদি থাকে রোগ জীবাণু তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? এই জায়গাগুলোকে যে কোনো মূল্যে নিরাপদ করতে হবে।
চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বাশহাটি থেকে সেবা নিতে আসা অলিউল্লাহর মা সাজেদা খাতুন বলেন, মশার উৎপাতে তিনি রাতে ঘুমাতে পারছেন না। বারান্দায় মশার কয়েল জালিয়ে রাত কাটিয়েছেন। এছাড়া হাসপাতালে
সেবা নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোগী জানান, হাসপাতাল ও এর আশপাশ এলাকা সবসময়ই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হয় কিন্তু তা নেই। এসব ময়লা থেকেও বাতাসের সাথে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ ও সৃষ্টি হচ্ছে মশা উৎপাদনের পরিবেশ। হাসপাতালের ভেতরের ড্রেনগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। খুবই বিশ্রী অবস্থা সেখানে। প্রতিটি ড্রেনে রয়েছে পচা কালো রঙের দুর্গন্ধযুক্ত পানি। যাতে তৈরি হয়েছে এডিস মশা উৎপাদনের উপযোগী পরিবেশ।
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মাহমুদুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অত্র হাসপাতালে যেখানে ৫ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী থাকার কথা, সেখানে মাত্র ২ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী আছে। ফলে সবকিছু যথাসময়ে পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। এখানে মাস্টাররোলে কয়েকজন লোক কাজ করছে।
এছাড়া হাসপাতালে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ৩টি এ্যাম্বুলেন্স ও পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
আরএস