মহাদেবপুরে ১৪০ কোটি টাকার ধান উৎপন্ন

আউসের ফলন ভালো, লাভ কম

কাজী সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২৩, ০৬:০৯ পিএম
আউসের ফলন ভালো, লাভ কম
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার কুঞ্জবনে আউস ধান কাটছেন চাষি এমরান হোসেন। ছবি: আমার সংবাদ

দীর্ঘ অনাবৃষ্টির পরও উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুরে এবার আউস ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে প্রান্তিক চাষিদের মুখে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উপজেলায় এবার প্রায় ১৪০ কোটি টাকার আউস ধান উৎপন্ন হয়েছে।

প্রণোদনার বীজ, সার আর চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শদানের ফলে চাষিরা জমি ফেলে না রেখে আউস ধানের চাষ করে এবার কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখছেন। উপজেলাজুড়ে এখন চলছে আউস ধান কাটা মাড়ার উৎসব। প্রতিটি চাষি পরিবার ব্যস্ত এখন এ উৎসবে।

চাষিরা বলছেন, এবছর দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টি, শ্রমিক সংকট, বেশি মজুরি, জ্বালানি তেল, সার, কীটনাশকের দাম বাড়ায় ধান আবাদের খরচও বেড়েছে। জমি তৈরি থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত এবার প্রতিবিঘা জমিতে আউস ধান চাষে খরচ হয়েছে আট হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। প্রতিবিঘা জমিতে ফলন হয়েছে কমপক্ষে ১৬ মণ। বাজারে এখন কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে। সেই হিসেবে এবার আউসে চাষিদের কিছুটা লাভ হয়েছে। তবে ধানের দাম মণপ্রতি আরো দুই/তিনশ’ টাকা বাড়লে চাষিদের উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভ হতো।

সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের কুঞ্জবন-ছাতড়া আঞ্চলিক পাকা সড়ক সংলগ্ন নিজের জমি থেকে আউস ধান কাটছিলেন কুঞ্জবন গ্রামের চাষি আফজাল হোসেন অফেলের ছেলে এমরান আলী। তিনি জানালেন, এবার ১০ কাঠা জমিতে আউস ধান লাগিয়েছেন। প্রথম দিকে খরা থাকলেও পরে আবহাওয়া ভাল হওয়ায় কোন সেঁচ দিতে হয়নি। এ ধানে পোকা খুব কম লাগে জন্য কীটনাশকও ছিঁটাতে হয়নি। এতকিছুর পরও ফলন হয়েছে ভালো। প্রায় আট মণ ধান হবে বলে আশা করছেন তিনি। নিজের জমিতে নিজেই কাজ করেছেন বলে খরচ খুব একটা বেশি হয়নি। এ ধান থেকে এবার তার ভালোই লাভ হবে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ জানান, এবার এই উপজেলায় আউস ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার ৮৪০ হেক্টরে। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে এবার চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে। এবার তিন হাজার ৬৮৫ জন প্রান্তিক চাষির প্রত্যেকের মধ্যে প্রণোদনা হিসেবে এক বিঘা জমি চাষের জন্য পাঁচ কেজি করে বীজ, ১০ কেজি করে এমওপি সার এবং ১০ কেজি করে ডিএপি সার বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহায়তা দিয়েছেন। ফলে এখানে আউসের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিদের উন্নত চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ২০টি প্রদর্শনী ক্ষেত স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কয়েকটি প্রদর্শনী ক্ষেতের ধান কাটা হয়েছে। এত গড়ে ফলন হয়েছে বিঘাপ্রতি ১৬ মণ। এই হিসেবে এবার এই উপজেলায় ৬৯ হাজার ৪৩২ মেট্রিক টন আউস ধান উৎপন্ন হবে। বাজার দর হিসেবে এর দাম হবে ১৩৮ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা।

এআরএস