কেন্দুয়া বাজারে চুরি-চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ধর্মঘট

কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩, ১০:৫৪ এএম
কেন্দুয়া বাজারে চুরি-চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ধর্মঘট

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা সদর বাজারটি অতি প্রাচীন এ বাজারে অন্তত সহস্রাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন। কেন্দুয়া থানাটিও এ বাজারেই অবস্থিত। তবে সম্প্রতি বাজারটিতে প্রতিনিয়তই সংঘটিত হচ্ছে চুরি, চাঁদাবাজি ও হামলার মতো ঘটনা। এসব ঘটনায় বর্তমানে চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।

তবে এসব ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা ও জিডি করলেও পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এবং দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনার মূল রহস্যটুকু পর্যন্ত পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

এরইমধ্যে গত সোমবার সন্ধ্যা রাতে বাজারের দিগদাইর মোড় এলাকায় স্থানীয় বাদে আঠার বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক রিয়াদ হোসেন তালুকদার দোলনের সাথে বিকাশে টাকা পাঠানোকে কেন্দ্র করে মোবাইল ব্যবসায়ী অপূর্ব নামে এক ব্যক্তির সাথে তর্ক-বিতর্ক হয়।

এরই জেরে মঙ্গলবার রাতে বাজার কমিটির সভাপতি এনামুল হক ভূঞার আত্মীয় কেন্দুয়া পৌরসভায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে কর্মরত শাহীন খানের সাথে দোলনের চাচাতো ভাই লিটনের ঝগড়া হয়।

এসব ঘটনায় বুধবার মোবাইল ব্যবসায়ী অপূর্ব বাদী হয়ে দিয়াদ হোসেন তালুকদার দোলন ও তার চাচাতো ভাই লিটনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার পাঁচজনকে আসামী করে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি মামলা এবং একই দিন সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান ও মারধরের অভিযোগে দোলন ও তার ওই চাচাতো ভাইসহ অজ্ঞাত আরও তিন চার জনের বিরুদ্ধে শাহীন খান বাদী হয়ে পৃথক আরও একটি মামলা করেন।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাজার কমিটির ডাকে বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ রেখে অর্ধদিবস ধর্মঘট পালন করেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করেন ব্যবসায়ীরা। এতে নের্তৃত্ব দেন বাজার কমিটির সভাপতি এবং পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, পৌর মেয়রের বড় ভাই এনামুল হক ভূঞা এবং বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান ভূইয়া।

এ সময় বাজার কমিটির সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, কেন্দুয়া বাজারে কোনো রকম চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না। অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন, যেকোনো মূল্যে তা প্রতিহত করা হবে।

এছাড়া এ ঘটনার ন্যায় বিচারের দাবিতে কেন্দুয়া পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি এবং অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত কেন্দুয়া বাজারের বাসা বাড়িতে ও বিভিন্ন দোকানে মালামাল, মোটরসাইকেলসহ অন্তত ৩০টির মতো চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে এর মধ্যে ১০টির মতো ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়েছে এবং দুটি ঘটনায় চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে পুলিশ। চুরি ও হামলার ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী কাজী মাজহারুল ইসলাম একটি মোটরসাইকেল চুরি, কেন্দুয়া থানার এসআই তানভীর মেহেদীর একটি মোটরসাইকেল চুরি। তবে রিপন মিয়া নামে এক কাপড় ব্যবসায়ীর দোকান থেকে রাতের বেলায় চোরেরা সকল মালামাল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এসব ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি।

এছাড়া সাউদপাড়া মহল্লার ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল তালুকদারের ওপর হামলা এবং চাল মহাল এলাকার বাসিন্দা বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম শফিকের বাসায় হামলা করে তার ভাই শহীদুল্লাহকে মারধরের ঘটনা ঘটে এবং টেংগুরী গ্রামের সোহাগের ভ্যারাইটিজ স্টোরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় বাজার কমিটি বা থানা পুলিশ তেমন কোনো ভূমিকা নেয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

কাপড় ব্যবসায়ী রিপন মিয়া জানান, রাতে আমার দোকানের সাঁটার ভেঙে কে বা কারা সব মালামাল নিয়ে যায়। কিন্তু ঘটনার এক বছর হয়ে গেলেও পুলিশ এ চুরির রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। এমন হলে আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা কিভাবে বাজারে ব্যবসা করব?

কেন্দুয়া বাজারের ব্যবসায়ী ও রিয়াদ হোসেন তালুকদার দোলনের চাচা ফরিদ তালুকদার জানান, বিকাশে টাকা পাঠানোকে কেন্দ্র করে দোলনের সাথে মোবাইল ব্যবসায়ী অপূর্বর তর্ক-বিতর্ক হলে বিষয়টি শেষ করে দেওয়া হয়। তবে পরদিন বাজার কমিটির সভাপতির আত্মীয় শাহীন খান বিষয়টিকে বড় করে। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলাও হয়েছে। কিন্তু শাহীন খান বাজার কমিটির সভাপতির আত্মীয় হওয়ায় তারা তার পক্ষ নিয়ে বাজারের ব্যবসায়ীদের নিয়ে ধর্মঘট করেছে। বাজারে এর আগে আরও কত চুরি, চাঁদাবাজি, হামলার ঘটনাই ঘটেছে কিন্তু বাজার কমিটি কিছু করেনি। কিন্তু এখন তাদের আত্মীয়ের সাথে ঝগড়া হওয়ায় তারা যা ইচ্ছা তাই করছে।

এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে। এছাড়া চুরি ও চাঁদাবাজিসহ অন্য যে মামলাগুলো রয়েছে, সেগুলোর তদন্ত চলছে এবং বেশির ভাগ মামলার আসামীদেরকেই গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেন ওসি।

হুমায়ুন কবির/এআরএস