অডিটোরিয়াম এখন ভূতুড়ে ঘর

পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩, ০৬:০৮ পিএম
অডিটোরিয়াম এখন ভূতুড়ে ঘর

কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার একমাত্র অডিটোরিয়াম অব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এখন ভূতুড়ে ঘরে পরিণত হয়েছে। নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকা মূল্যের পেকুয়ার বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিএমআই) অডিটোরিয়াম ভবন ও অত্যাধুনিক মূল্যবান জিনিস সামগ্রী।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় তিন ফুট ময়লা-আবর্জনার নিচে তলিয়ে গেছে অডিটোরিয়ামের ফ্লোর। ফ্লোরে জমে আছে হাঁটু পরিমাণ ময়লা পানি। পোকা মাকড় ও মশার ভ্যান ভ্যান আওয়াজ। কিছু ভাঙা কাঠের টুকরো প্রমাণ করছে মঞ্চের অস্তিত্ব। অধিকাংশ পাকা ও চেয়ার ভাঙা। ভাল্ব ও সাউন্ড সিস্টেমের হদিস নেই। দরজা নেই বললেই চলে। প্রায় সবকটি জানালার কাচ ভাঙা। ছাদের একটি অংশ ভেঙে সূর্যের আলো প্রবেশ করাতে খসে পড়া পলেস্তারা ও দেওয়ালের ফাটল দৃশ্যমান।

জানা গেছে, পেকুয়া বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের (বিএমআই) পাশে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অডিটোরিয়ামটির ২০০৩ সালের ২০ মার্চ কাজ শুরু হয়। এরপরের একই বছরের ১৮ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমদ। শুরুর কয়েক বছর অডিটোরিয়ামটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে থাকা অডিটোরিয়ামটি হাতবদল হয়ে বর্তমানে পেকুয়া বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের তদারকিতে এলেও তারা এ বেহাল দশার দায় নিতে অনিচ্ছুক।

পেকুয়া বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ এ এম ফরিদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘অডিটোরিয়ামটি আমাদের তদারকিতে আসার আগে থেকে এই বেহাল অবস্থায় ছিল। ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আনসার সদস্যরা এখানে বসবাস শুরু করেন। তারা যাওয়ার আগে অডিটোরিয়ামকে গোয়াল ঘরে পরিণত করেন। এটি সংস্কারের উদ্যোগ নিতে প্রধান নির্বাহী প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ ও বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেও কোনো সুরাহা মেলেনি। ২০০৯ সালের আগে ৬শ’ আসনের এই অডিটোরিয়ামটি মুখর ছিল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মকাণ্ডে।’

নিয়মিত চলত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এনজিও সংস্থার সভা, সেমিনার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনেক অনুষ্ঠানও ধারণ করা হয়েছে এই অডিটোরিয়াম থেকে। চোখের সামনে সংস্কৃতির এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নষ্ট হয়ে যাওয়াতে হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।

সাংস্কৃতিককর্মী মোস্তাকিম বলেন, অডিটোরিয়ামটি উদ্বোধনের পর পেকুয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গন বিকাশের একটি দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল। কিন্তু এভাবে অযত্ন-অবহেলায় এটি নষ্ট হয়ে যাওয়া পেকুয়াবাসীর জন্য খুবই হতাশাজনক। এটি রক্ষা করতে না পারলে চরম ক্ষতির মুখে পড়বে বিনোদন জগৎ ।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুর্বিতা চাকমা জানান,পেকুয়ায় এমন একটি অডিটোরিয়াম আছে তা আমি জানতাম না। নিঃসন্দেহে পেকুয়ার সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য এটা বড় সম্পদ। আমি সরেজমিন এটি পরিদর্শন করে বিস্তারিত তথ্য জেনে পরবর্তীকালে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে তা জানাব।

এআরএস