মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্রতিটি সড়ক ও মহাসড়ক ধুলার কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে সবসময়। পৌরসভার বেঊথা কালিগঙ্গা নদীতে বালুমহাল ইজারা দেওয়ায় রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন ও অনিয়তান্ত্রিকভাবে বালু পরিবহনের কারণে ধীরে ধীরে রাস্তাগুলো ধুলার আবরণ সৃষ্টি হয়ে পড়ছে। সেই ধুলা বাতাসে শহরস্থ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, বিভিন্ন খাবার হোটেল, মুদি দোকানপাটে ও পথচারীদের নাকে-মুখে ঢুকে পড়ে।
এত ধুলার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত নানারোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। পথচারী, যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধদের। ধুলার সঙ্গে নানারকম ক্ষতিকর জীবাণু শরীরে প্রবেশ করছে। নোংরা, দূষিত ধুলা শরীরে এসে পড়ায় চর্মরোগের প্রকোপও বাড়ছে।
চোখের নানা সমস্যাতেও ভুগছে অনেকে। বিশেষ করে বেউথা তিন রাস্তার মোড়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, খালপাড় মোড়, বাসস্টান্ড ও জেলা পুলিশ লাইনের সামনে বালুর স্তুপ পরে থাকা সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ ও সড়ক বিভাগ সড়কে ধুলাবালির আধিক্য কমাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
পৌরসভার প্রতিটি সড়কই ধুলায় একাকার। রাস্তার সংস্কার কাজ কিংবা রাস্তার পাশে ভবন নির্মাণের জন্য ইট, বালু, খোয়াসহ সকল নির্মাণ সামগ্রীই রাস্তার পাশে খোলা অবস্থায় ফেলে রাখতে দেখা যায়। যানবাহন চলাচলের সময় ও হালকা বাতাসে ধীরে ধীরে সেগুলো রাস্তার উপর ছড়িয়ে পড়ে। আবার ট্রাকে বালু পরিবহনের সময় বালু ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখার নিয়ম থাকলেও মানছেন না তারা। এতে চলন্ত ট্রাক থেকে বালু বাতাসে উড়ে গিয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছে। সেই ধুলাবালি পুরো এলাকার বাতাসে মিশে যায়। রাস্তা ও আশেপাশের লোকজনের চোখে মুখে বালু এসে পড়ে। ধুলার আধিক্যে এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অনেকেই ধুলাবালু থেকে বাঁচতে মুখে মাস্ক ও রুমাল ব্যবহার করছেন।
মানিকগঞ্জ শহরের সড়ক ও মহাসড়কের আশপাশের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গাছপালা সবই ধুলায় ছেয়ে গেছে। একটু বাতাস বইলে ধুলার কারণে কিছু দেখা যায় না। এতে বেশি সমস্যায় পড়ছেন মোটরসাইকেল, রিকশা ও বাস চালকরা। ধুলাবালির কারণে সামনে দেখতে অসুবিধা হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক ও রাস্তার পাশে হোটেল রেস্তোরাঁ থাকায় প্রতিনিয়ত ধুলাবালি উড়ে গিয়ে খাবারের উপর পড়ছে। এতে খাবারে মান নষ্টসহ তাতে রোগ জীবাণু প্রবেশ করছে। আর সেই খাবার খাচ্ছে দুর-দুরন্ত হতে আসা পথচারীরা। তাদের হচ্ছে নানা রকম ফুড পয়জেন্ট আবার অনেকেই ভুগছেন মরণব্যধিতে।
এই শহরের একাধিক পথচারীরা বলেন, শহরে ধুলাবালি থাকলেও বড় বড় স্যারগো সমস্যা হয় না, তাগোতো চার চাকার গাড়ি আছে। গাড়িতে উঠেই তারা গ্লাস লাগিয়ে এসি ছেড়ে বসে থাকে। তাগরে গরম ও ধুলাবালিতে পায় না। আমাগো খবর নিবো কে?
সরকারি দেকেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী লিজা রহমান বলেন, সড়কে ধুলাবালুর কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বাইরে বের হলেই পোশাক ধুলাবালিতে ময়লা হয়ে পরিধানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাছাড়া চোখে মুখে ধুলা বালু ঢুকছে প্রতিনিয়ত।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইউসুফ আলী বলেন, আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা ছাড়া কোন বক্তব্য দিতে পারবো না।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, ধুলার সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ ও জীবাণু মিশে গিয়ে খাদ্যদ্রব্যে কিংবা নাকমুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তাদের জন্যে আরো বেশী ক্ষতিকর। অপরদিকে ধুলাবালি চোখে গিয়েও চোখের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র মো. রমজান আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, বেওথা বালু মহাল ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা ইজারা নিয়েছে। অনিয়মন্ত্রাতিকভাবে বালু পরিবহনের সময় আমি ইজারাদারদের বলেছিলাম, পৌরসভার ভিতর দিয়ে এভাবে খোলামেলাভাবে বালু নিলে পরিবেশ দূষণসহ মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বৃদ্ধি পাবে এবং কি যারা রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান চালায় ও রাস্তার আশেপাশে যে সমস্ত হোটেল মুদি দোকান আছে তারা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তখন তারা আমাকে বলে আমরা চার কোটি টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি।
এআরএস