বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ তাফালবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান হাওলাদারের বসতবাড়িটি স্থানীয়দের কাছে এখন বকবাড়ি নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। কারণ তার বাড়ির বাগানে চলতি বছর এক জোড়া নুতন প্রজাতির ধবধবে সাদা বক বাসা বেঁধেছে। এ বকের পাগুলো লাল। ঠোঁট হালকা ও গাড় নীল রঙের। চোখের মণি গাড় হলুদ বর্ণের। এ বকের আরও একটি আকর্ষণীয় দিক হলো, ডানা ঝাপটা দিতেই ময়ূরের মতো পালক ছড়িয়ে পড়ে। যা দেখে অনায়াসে পাখি প্রেমিদের মন কাড়ে।
স্থানীয়রা জানান, সারাদিন সুন্দরবনের বিভিন্ন চরসহ মাঠে-ঘাটে ঘুরে নিজেরা পেট পুরে খাবার শেষে বাচ্চাদের (ছানা) জন্য খাবার সংগ্রহ করে সন্ধ্যার আগেই ঝাঁকে ঝাঁকে বক উড়ে আসতে থাকে মান্নানের বাড়িসহ আশপাশের বাড়িগুলোতে। বকগুলো এসে তাদের তৈরি করা বাসায় বসেন। আবার অনেক স্ত্রী বক সারাদিন বাসায় বসে ডিমে তা দিয়ে থাকেন। এরই মধ্যে অনেক বাসায় বেশ কয়েক জোড়া ছানাও ফুটেছে। ছানাগুলো উড়তে শেখেনি, তবে শরীরে পালক গজিয়েছে। স্ত্রী বক সেই বাচ্চাদের পাহারা দিচ্ছে।
তবে, এবার তার বাড়িতে শুধু বকই নয়, পানকৌড়ি, দেখা যাচ্ছে। মান্নান হাওলাদারের বাড়ি ছাড়াও তার প্রতিবেশী দীপঙ্কর মিত্রর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে সাদা বক, কানি বক ও বাদুড়। এছাড়া ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এবছর দেখা মিলছে নানা প্রজাতির পাখি। নানা জাতের পাখি দেখতে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লোকজনও আসছেন এসব বাড়িতে।
আব্দুল মান্নান হাওলাদার বলেন, ২০০৮ সালে আমার বাড়ির একটি মেহগনি গাছে দুই জোড়া সাদা বক এসে বাসা বাঁধে। সেই বকের বাচ্চা এবং প্রতি বছর নতুন করে আরও বক আসতে থাকে। এখন আমার বাড়ি ছাড়াও আশপাশের অনেক বাড়িতে কয়েক শত বক থাকে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে আসা শুরু করে। তার পর নতুন বাসা তৈরি করে, বাচ্চা ফুটিয়ে বড় করা নিয়ে আশ্বিন-কার্তিক মাস পর্যন্তু বকসহ অন্য পাখিগুলো এখানে থাকে। তার পর আবার কোথায় যেন চলে যায়। চার-পাঁচ মাস পর পুনরায় ফিরে আসতে শুরু করে।
নানা জাতের পাখির কারণে তার বাড়ি-ঘর, নোংরা হয়। তারপরও পাখিগুলো তাড়ান না। তার মতে পাখিদের থাকার নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারলে নতুন জাতের আরো পাখি তার এলাকায় বাসা বাঁধবে।
নুতন প্রজাতির বকসহ নানা ধরনের পাখি দেখতে আসা ওই এলাকার শিক্ষার্থী তারিণ, মিম, রিয়াজ হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, আমরা সাদা বকের দলসহ অন্য পাখি দেখে খুব আনন্দ পাই। তাই সময় পেলে মান্নান কাকার বকবাড়িতে আসি। সব ধরনের পাখির সংরক্ষণ ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার দাবি করেন তারা।
এআরএস