চাঁদপুর জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ)। আসনটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বলে জেলায় পরিচিত। ভোটার সংখ্যাও বেশি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্রমশ জমে উঠছে নির্বাচনী হাওয়া।
সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মন জয় করতে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় একডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চাইছে আগামী নির্বাচনেও এ আসনটিতে বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে। অন্যদিকে বিএনপির টার্গেট এ আসনটি দখলে নিতে।
১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে এ আসন গঠিত। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯ হাজার ৭৬৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮০২ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৬ জন।
দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ আসনটি বেশিরভাগ সময় বিএনপির দখলে থাকলেও ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার মধ্যদিয়ে আসনটি হাতছাড়া হয়ে আ’লীগের দখলে চলে যায়। মূলত এ আসনটিতে বিএনপির বড় অঙ্কের ভোট ব্যাংক। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ আসনটিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিএনপির দুর্গে হানা দিয়ে এখন আসনটিতে আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
নির্বাচনের এখনো কিছু সময় বাকি থাকলেও উভয় দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভোটারদের কাছে গিয়ে তাদের মন জয় করতে মাঠে নেমেছেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকার বিজয়ের ধারা ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। অপরদিকে বিএনপি চায় ১ দশক ধরে হাতছাড়া হয়ে থাকা এই আসনটি তাদের দখলে নিতে। আগামী নির্বাচনে দুই দলের মনোনীত প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতার ওপরই নির্ভর করবে এ আসনটি কে বা কারা জয়লাভ করতে পারে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. শামছুল হক ভূইয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহম্মদ শফিকুর রহমান বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য লায়ন হারুন-অর রশিদকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এ আসনটি নৌকার জয় জয়কার হলেও আসনটি মূলত বিএনপির একটি শক্ত অবস্থান রয়েই গেছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে এ আসনটিতে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে দ্বদ্ব, ভেদাভেদ ও দলীয় কোন্দল রয়েছে।
মূলত, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে এ দলের মধ্যে মাঝে মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। আগামী সংসদ নির্বাচনের পূর্বে দলীয় কোন্দলের অবসান না হলে নৌকার জয় নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বলেই মনে করছেন স্থানীয় সচেতন নেতাকর্মীরা। আর আওয়ামী লীগের এই কোন্দলকে পুঁজি করে বিএনপি তথা জোটগত প্রার্থী সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফেলতে পারেন বলে সচেতনমহল মনে করেন।
এদিকে বিএনপিতেও দলীয় দ্বন্ধের কারনে গ্রুপিং বিরাজমান রয়েছে। এ আসনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন-বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহম্মদ শফিকুর রহমান, আ’লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও সাবেক সাংসদ ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. হারুন অর রশিদ সাগর, উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমান, শিল্পপতি ও কাতারস্থ আ’লীগের সহ-সভাপতি সিআইপি জালাল আহাম্মেদ।
অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংকিং ও রাজস্ব বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি লায়ন হারুন- অর রশিদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিআইপি মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী, জেলা বিএনপির ১নং সদস্য ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ হান্নান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট আব্বাছ উদ্দীন ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শরীফ মোহাম্মদ ইউনুছ।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বৈদেশিক ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী সাজ্জাদ রশিদ সুমনের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের (মার্কসবাদী) নেতা কমরেড আলমগীর হোসেন দুলাল।
এইচআর