কুমিল্লায় শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনে গৃহকর্ত্রী গ্রেপ্তার

কুমিল্লা প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৩, ০৭:৪৬ পিএম
কুমিল্লায় শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনে গৃহকর্ত্রী গ্রেপ্তার

গৃহপরিচারিকা সুমি আক্তারের (৯) চোখে-মুখে ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অমানবিক নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন। তার বাবা-মা নেই। বেশ কয়েক বছর যাবত সে কুমিল্লা নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের (সদর দক্ষিণ উপজেলা) জাঙ্গালিয়া এলাকার সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ফারহানা আলম দম্পতির বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করে আসছে। প্রায়ই তার উপর চালানো হতো নির্যাতন।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে নির্যাতনের পর তাকে বাথর“মে আটকে রেখে বাসার দরজায় তালা মেরে বন্দি অবস্থায় রেখে চলে যায় বাসার লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) নিয়ে ভর্তি করে। এ ঘটনায় গৃহকত্রী ফারহানাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বুধবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।

এদিকে বুধবার (১৮ অক্টোবর) হাসপাতালে ওই শিশুর খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে চিকিৎসক-কর্মচারীদের হাতে লাঞ্ছিত হন একটি টেলিভিশনের কুমিল্লা ব্যুরো প্রধান ও ক্যামেরাপার্সন।

পুলিশ জানায়, নগরীর জাঙ্গালিয়া এলাকার ‘রক্তিম হাউজ’ নামের একটি বাসায় মঙ্গলবার রাতে শিশু গৃহকর্মী সুমি আক্তারের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে পার্শ্ববর্তী বাসার লোকজন ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশে খবর দেয়। রাত সোয়া ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে একই ভবনের একটি ফ্ল্যাটের মালিক থেকে চাবি নিয়ে ঘরের তালা খুলে বাইরে থেকে আটকানো বাথরুমের ছিটকিনি খুলে শিশুটিকে উদ্ধার করে কুমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে নিয়ে ভর্তি করে। সুমির চোখ, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, প্রায়ই ওই বাসা থেকে তারা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতেন।

নির্যাতিত শিশু গৃহকর্মী জানায়, তার বাবা-মা নেই, বাড়ি কোথায় তাও জানা নেই। অবুঝ অবস্থায় সে এই বাসায় কাজ করে আসছে। প্রায় প্রতিদিন কারণে-অকারণে মেডাম (গৃহকত্রী) তার ওপর নির্যাতন করতো। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কাঠ দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে বাথরুমে আটকে রেখে বাসায় তালা দিয়ে তারা চলে যায়। রাতে দীর্ঘক্ষণ ধরে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে প্রতিবেশিরা পুলিশে খবর দেয়।

সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর ভূঁইয়া বলেন, ৯৯৯-এ খবর পেয়ে খবর পাওয়ার পরই মঙ্গলবার রাতে ওই বাসার বাথররুম থেকে শিশু গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। রাতেই অভিযান চালিয়ে লাকসাম থেকে গৃহকত্রী ফারহানা আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় খবর দেয়া প্রতিবেশী আশিকুর রহমান বাদী হয়ে ওই দম্পতির বিরুদ্ধে বুধবার দুপুরে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তার গৃহকত্রী ফারহানা আলমকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ওই গৃহকর্মীর বিস্তারিত পরিচয় এখনো জানা সম্ভব হয়নি। গ্রেপ্তার গৃহকর্ত্রী তার মায়ের মাধ্যমে ৪ বছর বয়সে গৃহকর্মী সুমিকে এ বাসায় এনেছিল। ৫ বছর আগে গৃহকর্ত্রীর মা মারা গেছেন, তাই গৃহকর্মীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে ওসি জানিয়েছেন।

এদিকে বুধবার বেলা ১১টার দিকে কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুমির বিষয়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হাসাপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের কুমিল্লা ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম চৌধুরী খোকন ও ক্যামেরাপারসন কামরুল হাসান।

সাংবাদিক খোকন বলেন, খবর সংগ্রহকালে হঠাৎ ডা. আবু জাফর সানি এসে তার সঙ্গে অশালীন আচরণ শুরু করেন এবং পরে তিনি কর্মচারীদের নিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাদেরকে ওই ওয়ার্ড থেকে বের করে দেন। তাদের এমন অশালীন আচরণের ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি সরকারি একটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। খবর পেয়ে হাসাপাতালে এসে খোঁজখবর নিয়েছি এবং ওই সাংবাদিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজসহ সাংবাদিক নেতারা। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

আরএস