ফেনীতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এতিমখানা প্রধানকে অব্যাহতি

ফেনী প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ০৭:৩৮ পিএম
ফেনীতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এতিমখানা প্রধানকে অব্যাহতি

ফেনীতে অর্থ-আত্মসাতের অভিযোগে শতবর্ষী একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রধানকে গোপনে  অব্যহতি দিয়ে নগদ ৩৫ লাখ টাকা উদ্ধার করেও প্রতিষ্ঠান কোষাগারে জমা দেননি পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি।স্থানীয়দের দাবি বিষয়টি মুলত চোরের উপর বাটপারি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার  গোবিন্দপুর হাজির বাজারের দক্ষিন পাশে ১৯৩৫সালে এ দ্বিনী প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। 

প্রতিষ্ঠার পর থেকে নুরানী হাফেজিয়া ও এতিমখানা মাদরাসাটির নামে স্থানীয়দের দান-অনুদানে পরিচালিত হয়ে আসছে মাদ্রাসা ও এতিমখানাটি ।

স্থানীয়দের অভিযোগ,এর মধ্যে গত ১৭ বছর ধরে পরিচালনা কমিটির  সাধারণ সম্পাদকের একক সিদ্ধান্তে চললেও প্রতিষ্ঠানটির নেই কোন গঠনতন্ত্র কিংবা বাৎসরিক আয়-ব্যায়ের হিসাব নিকাশ।

সম্প্রতি সাধারণ সম্পাদক হানিফ মেম্বার প্রতিষ্ঠনটির বর্তমান (অধ্যক্ষ) প্রধান শিক্ষক  মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধকোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আনে। এ গঠিত অডিট কমিটি
বিষয়টিন সত্যতা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন।

কমিটির সদস্য শাহ আলম জানান, এ মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির মসজিদ নির্মান করতে গিয়ে বিভিন্ন হিসাব নিকাশে আট লক্ষ টাকা গরমিলের সন্ধান পাওয়া গেছে । বিষয়টি প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি নুর উদ্দিনকে জানানো হলে তিনি আরও বিষদভাবে হিসাব নিকাশ করার কথা বলেন। হিসাব করতে গিয়ে দেখা যায় মাদরাসা প্রধানের সাথে সাধারন সম্পাদেক যোগসাজোশে প্রাথমিক ভাবে ৩৫লক্ষ টাকা লোপাটের সমাপৃক্ততা পাওয়া যায়।

বিষয়টির সত্যতা জানতে চাইলে সভাপতি নুর উদ্দিন আফছার জানান, তিনি ২০১৭ সালের শুরুর দিকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার ভাষ্যমতে প্রতিষ্ঠানটি গড়েছেন তাঁর পূর্ব পুরুষরা।

তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটির সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে আছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৮শত ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। এর মধ্যে আবাসিক ও অনাবাসিক ছাত্রও রয়েছে।বেশ কিছু সংখ্য এতিম ছাত্র-ছাত্রীরাও পড়ালেখা করছে।

স্থানীয় এলাকবাসীর অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটি বেশ সুনামের সাথেই চলছিলো।গত বেশকিছুদিন পূর্বে এলাকার মানুষজনের অনুদানে প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে একটি মসজিদ নির্মান কাজ চলমান রয়েছে।

ওই কাজের আয়-ব্যায়ের হিসাবের স্বার্থে তিন সদস্যের একটি অডিট কমিটি গঠন করা হয়।তারা অডিট করতে গিয়ে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার গরমিল ধরা পড়ে। পরবর্তিতে এ সংক্রান্ত বৈঠকে  প্রতিষ্ঠানটি আরও ২৮লাখ ৫০ হাজার টাকার  হিসেবে গড়মিল পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে ওই টাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক "অধ্যক্ষ‍‍`র" কাছ থেকে উদ্ধার করেছে।তবে এখনও   প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক একাউন্টে টাকাগুলো জমা দেননি তিনি।

এতদিনেও কেন প্রতিষ্ঠানটির আয়-ব্যায়ের হিসেব করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে  হানিফ মেম্বার  বলেন তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাই এতদিন এ বিষয়ে তেমন কাজ করতে পারেননি। এখন সাধারন সভা হবে। তখন সব বিষয়ে আলোচনা হবে। সাংবাদিকদেরও জানানো হবে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি জানান, হানিফ মেম্বার এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী।তিনি মাদরাসার অর্থ কেলেঙ্কারীতে সরাসরি জড়িত। নিজের অনিয়ম ডাকতে মাদরাসার অধ্যক্ষকে সরিয়ে দিয়েছেন।

তাঁদের অভিযোগ তিনি প্রায় সময় ব্যাক্তিগত কাজে মাদরাসা ফান্ডের টাকা  অধ্যক্ষের মাধ্যমে নিজেই ব্যবহার করেছেন।যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।তার এ অপরাধের সুযোগে অধ্যক্ষও একই পথের পথিক হয়েছেন উল্লেখ করে তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থাগ্রহণে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।

বিষয়টি জানতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে গিয়েও তাঁর খোঁজ মেলেনি।

এব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক মো. হানিফ প্রকাশ হানিফ মেম্বার জানান, "অধ্যক্ষ" মামুনুর রশিদের অনিয়ম খুঁজে পাওয়ায় তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় দেয়া হয়েছে। টাকা লোপাটের বিষয়টি সঠিক নয়। আমরা মাদরাসা "অধ্যক্ষ‍‍`র" কাছ থেকে টাকাগুলো উদ্ধার করেছি।

তবে, সে টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে কিনা প্রথমে এ প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।যদিও এক পর্যায়ে জমা হয়েছে বলে স্বীকার করলেও কোন ব্যাংকের কোন শাখায় জমা হয়েছে সেটি জানাতে পারেননি  তিনি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ডালিম বলেন, প্রতিষ্ঠানটির অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান একে শহীদ খোন্দকারসহ বিষয়টি নিয়ে বৈঠকেও বসেছেন।পরে "অধ্যক্ষ‍‍`র" বাড়ী থেকে ১৬লক্ষ টাকা এবং ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ১৮ লক্ষ টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে,টাকাগুলো প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসোবে জমা হয়নি কেন?
এ প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর মেলেনি তাঁর কাছেও।

ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ন রশিদ জানান, যেহুতু বেসরকারি ও হাফেজিয়া মাদরাসা সেহুতু অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষা কমর্কর্তা ও পরিচালনা কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সাথে কথা বলে একটি তদন্ত প্রতিবেদন বেপাকে পাঠানো হবে।

তিনি আরও বলেন,আমার পরামর্শ থাকবে যাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তাদের আসামী করে আদলত অথবা থানায় একটি মামলা রুজু ও আইনের মাধ্যমে তাদের সাজা নিশ্চিত করা। যেন কেউ এ ধরনের দুর্নীতি করতে না পারে।

আরএস