কাঁচা আমে তৈরি হবে আঁচার, প্রতিমণ ৭০০ টাকা

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৪, ১১:৪৩ এএম
কাঁচা আমে তৈরি হবে আঁচার, প্রতিমণ ৭০০ টাকা

তীব্র খরা এবং প্রাকৃতিক কারণে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে তুলনামূলক কম ফলন হয়েছে আমের। শুরুরদিকে গাছে গাছে কিছু মুকুল থাকলেও অনাবৃষ্টি ও খরাতে শেষ পর্যন্ত গুটি এসেছিল কিছু সংখ্যক গাছে। চলতি মৌসুমে গাছে আম ধরেছে হতাশাজনক।

গাছে থাকা এসব আম পাক ধরতে সময় লাগবে আরো বেশ কিছু দিন। তবে তার মাঝেই গাছ কাঁচা আম সংগ্রহ করছেন অনেক বাগান
মালিক। গাছ থেকে সংগ্রহ করা নানা সাইজের কাঁচা আম চলে যাচ্ছে প্রাণ সহ বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিতে। সরাসরি গ্রামাঞ্চল থেকে এসব কাঁচা আম নিয়ে যাচ্ছে বহুজাতিক খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। তাদের সংগ্রহ করা এসব কাঁচা আম ব্যবহার হবে প্যাকেটজাত আমের আঁচার তৈরিতে।

মধুমাস জ্যৈষ্ঠ আসার আগের ছোট বড় ব্যবসায়ী এবং বাগান মালিকরা লাভের আশায় গাছ থেকে সংগ্রহ করছেন কাঁচা আম। এতে চলতি মৌসুমে বাজারে পাকা আমের সংকট সৃষ্টি আশঙ্কা থাকলেও, লাভের
আশায় অনেকেই কাঁচা আম বিক্রি করে দিচ্ছেন।

শুক্রবার সকালে ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার পুরাতন বাজার ঘুরে দেখা যায়, একাধিক ফাঁকা দোকানে বিছিয়ে রাখা আছে নানা জাতের কাঁচা আম। শ্রমিকরা মেঝে থেকে সাইজ অনুযায়ী বেছে এসব কাঁচা আম বস্তা ও প্লাস্টিকের ক্যারেটে ভরাচ্ছেন। ব্যাটারী চালিত ভ্যান, ইজিবাইক, রিকশা ও সাইকেলে অনেকে ক্যারেটে ভরিয়ে কাঁচা আম নিয়ে আসছেন এসব ছোট গুদাম ও দোকানে। কাঁচা আম নিয়ে আসা তাদের অধিকাংশজনই বাগান মালিক। আমের ওজন মেপে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন তারা সকলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে এসব কাঁচা আম। নিজ বাগান এবং বাড়িতে থাকা গাছ থেকে কাঁচা আম সংগ্রহ করে বাজারে পাইকারের কাছে বিক্রি করছেন মালিকরা। প্রতিদিন সকাল-সন্ধায় প্রাণ কোম্পানির নিজস্ব গাড়ি এসে এসব কাঁচা আম নিয়ে যাচ্ছে তাদের কারখানায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এসব কাঁচা আম কোম্পানিকে দিচ্ছেন কমিশনের ভিত্তিতে। প্রাণ কোম্পানি প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে কাঁচা আমের। সেই নির্ধারিত মূল্যে স্থানীয় বাগান থেকে আম সংগ্রহ করছে ব্যবসায়ীরা। প্রাণ কোম্পানির কাছে থেকে মণ প্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমিশন পাচ্ছে এসব ব্যবসায়ীরা। নিজ গাছ থেকে ৬ মণ কাঁচা আম সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছিলেন আজাহারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় আমার গাছে আমের ফলন অনেক কম। সামনে শিলাবৃষ্টি হলে গাছে যে আম আছে, সেটিও নষ্ট হয়ে যাবে। তাই কাঁচা আম বিক্রি করছি।’

আরেক বাগানী মুনসুর আলী। তিনি বলেন, ‘আম পাক ধরার পর বাজারদর কেমন থাকবে তার ঠিক নেই। কাঁচা আম বিক্রি করেই ভালো দাম পাচ্ছি। তাই বিক্রি করে দিচ্ছি। সামনে ঝড়বৃষ্টি হলেও কোন চিন্তা থাকবে না। ’

আম ব্যবসায়ী শাহিন মন্ডল বলেন, ‘গত ১০ দিন যাবত কাঁচা আমের ব্যবসা করছি। প্রাণ কোম্পানি সরাসরি আমাদের কাছে থেকে কাঁচা আম নিয়ে যাচ্ছে। আজ (শুক্রবার) প্লাস্টিকের ১১১টি ক্যারেটে ৫৫ মণ কাঁচা আম প্রস্তুত করে রেখেছি। সন্ধ্যায় গাড়ি এসে এসব আম নিয়ে যাবে। আমি নিজেই প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ মণ কাঁচা আম কোম্পানিকে দিচ্ছি। এতে মণ প্রতি দু‘চার টাকা কমিশন পাচ্ছি।তাতে প্রতিদিন ভালো একটা টাকা উপার্জন হচ্ছে। আমার মত আরো অনেকেই প্রাণ কোম্পানিতে কাঁচা আম সরবরাহ করছে।’

বিআরইউ