কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার পারুয়ারা গ্রামে পূর্ব বিরোধের জেরে যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আবুল হোসেনের বাড়ি ঘরে দিনের বেলায় হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে হামলার দিন রাতেই ওই সেনা সদস্যের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ক্রমাগত হামলা ও বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকির মুখে রয়েছেন ওই সাবেক সেনা সদস্য।
জানা যায়, বুড়িচং উপজেলার পারুয়ারা গ্রামে সাবেক সেনা সদস্য আবুল হোসেন এর সাথে তার ভাই যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফার সাথে জমি সংক্রান্ত ও অটো রাইসমিল নিয়ে পূর্ব বিরোধ চলে আসছিল।
এ বিষয়ে পূর্বে সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি। পূর্ব বিরোধের জের ধরে সোমবার (৫ মে) সকাল দশটায় গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেনা সদস্য আবুল হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায়।
হামলাকারীরা এ সময় বাড়ির সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। প্রাণভয়ে আবুল হোসেন ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। হামলাকারীরা বাহির থেকে দরজা জানালা কুপিয়ে আবুল হোসেনের ছেলে জয়নাল আবেদীন সুমনকে খোঁজ করতে থাকে।
তাৎক্ষণিকভাবে আবুল হোসেন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নাম্বারে কল দিলে আধ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।
পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা হুমকি-ধামকি দিয়ে দলবল নিয়ে পার্শ্ববর্তী পশ্চিম সিংহ গ্রামে আবুল হোসেনের ছেলে জয়নাল আবেদীন সুমনের ভাড়া বাড়িতে হামলা চালায়।
হামলাকারীদের এ সময় বাড়ির সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে ঘরে প্রবেশ করে নারী ও শিশুদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে।
এ সময় ঘরের মূল্যবান মালামাল ভাঙচুর করে আলমারিতে থাকা ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা, তিন ভরি স্বর্ণ, তিনটি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে বাহির থেকে তালা দিয়ে চলে যায়।
হামলার খবর পেয়ে বাড়ির বাহিরে থাকা জয়নাল আবেদীন সুমন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কল দিলে দ্রুত পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়।
এদিকে আহতদের চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকায় ঐদিন রাতেই দুর্বৃত্তরা আবুল হোসেনের একটি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে করে ঘরে থাকা বিভিন্ন মালামালসহ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এ বিষয়ে সেনা সদস্য জানান, হামলাকারীরা ইতিপূর্বে তাকে ও তার পরিবারের লোকজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছিল। মার্চ মাসের ২০ তারিখে একই কায়দায় তার পরিবারের উপর হামলা চালায় গোলাম মোস্তফা ও তার লোকজন। তিনি এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ইতোমধ্যে তারা সেনা সদস্য আবুল হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না এবং সুমন এন্টারপ্রাইজ গ্যাস দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে বুড়িচং থানা ও আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত গোলাম মোস্তফা জানান, হামলা ও লুটপাটের ঘটনা সঠিক নয়। সুমনের খোঁজে বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী মোবাইলে ভিডিও করার কারণে তার মোবাইল নিয়ে আসা হয়েছে। অটো রাইস মিল সংক্রান্ত টাকা-পয়সার লেনদেনের জেরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।
এ বিষয়ে বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক জানান, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এছাড়া সকালে তিনিসহ দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
আরএস