রাজশাহীর দুর্গাপুরে গবাদি পশুর শরীরে ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)’ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকটি গরু সম্প্রতি মারা গেছে। এতে গরুর খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
রোগটির সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। তবে বাইরের দেশ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে। কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভাইরাসটির বিস্তার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খামারিরা জানান, রোগটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এবং তারা উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন। তবে চাহিদার তুলনায় ভ্যাকসিনের ঘাটতি রয়েছে। ফলে, অনেক খামারি হাতুড়ে পশু চিকিৎসকদের সাহায্য নিচ্ছেন, কিন্তু তাদের ভুল চিকিৎসায় গবাদিপশু সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
বুধবার সকালে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে দেখা হয় পানানগর এলাকার খামারি জাফরের সাথে। তিনি বলেন, "প্রাণীসম্পদ হাসপাতালে এসে ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ নিয়ে আক্রান্ত গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে। তবে আমার আরো ৩টি গরু ‘লাম্পি ভাইরাসে’ আক্রান্ত হওয়ায় চিন্তিত। অনেক গরু মারা গেছে, এবং এলাকায় রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।"
জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে অনেক গরু মারা গেছে। বহু খামারি ও কৃষক লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু কম দামে বিক্রি করছেন। সংক্রমণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা, যেমন জয়নগর, দেলুয়াবাড়ি, দেবীপুর, পানানগরসহ কয়েকটি এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
উপজেলার দেবীপুর গ্রামের খামারি জাহিদ বলেন, "আমাদের খামারের একটি বড় গরুর পা ফুলে সারা গায়ে ফোসকা বের হয়েছে। গরুটির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল, কিন্তু প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শে চিকিৎসা নিয়ে গরুটি ভালো হয়েছে। এরপর ছোট বাছুরও আক্রান্ত হলে আবার চিকিৎসার জন্য আসলাম।"
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভাইরাস ‘লাম্পি স্কিন’ সংক্রমণ বেড়েই চলছে, তবে এর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। রোগের ভ্যাকসিন রয়েছে, তবে সেটি চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত পশুকে এন্টিহিস্টামিন ও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো গেলে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, "লাম্পি ভাইরাসে আক্রান্ত গবাদিপশু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে, গায়ে গুটি গুটি ফোড়ার মতো হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। সুস্থ হতে প্রায় কয়েক মাস সময় লাগে। অসুস্থ গরুকে প্রথমেই আলাদা করতে হবে এবং মশারি টাঙিয়ে রাখতে হবে, যাতে মশা বা মাছি আক্রান্ত গরুর শরীরে না বসে।"
তিনি আরও বলেন, "লাম্পি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে উপজেলার ৫৪০ জন খামারির সাথে পরামর্শ প্রদান, লিফলেট বিতরণসহ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।"
ইএইচ