মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় একটি মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে মারধর এবং এক শিক্ষার্থীকে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক।
অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের সরুপাই আলহাজ আব্দুল হালিম দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. ইউসুফ আলী (৫৫)। তিনি সদর উপজেলার বেতিলা গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালেব মোল্লার ছেলে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বুলবুল (১৪) ও তার বন্ধু রাফি (১৪) প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাইকেলে মাদরাসায় যাচ্ছিল। পথে মা সুপার ইউসুফ আলী তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে মাদরাসায় পৌঁছালে তিনি দুজনকে চরথাপ্পড় মারেন এবং বাঁশের বেত দিয়ে বুলবুলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। এতে বুলবুলের দুই পা ও শরীরে গুরুতর নীলাফুলা জখম হয়। রাফি বন্ধুকে বাঁচাতে গেলে তাকেও বেত দিয়ে মারধর করা হয় এবং গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধের চেষ্টা করা হয়।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে পরিবারকে বিষয়টি জানায়। পরে বুলবুলকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
২০১৩ সালের শিশু আইন অনুযায়ী, ৭০ ধারায় শিশু নির্যাতনের জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড এবং ৮৬ ধারায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের নির্দেশনাতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকেরা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “একজন শিক্ষক এভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করতে পারেন না। আমরা অভিযুক্ত সুপারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে মাদ্রাসা সুপার ইউসুফ আলী বলেন, “ওরা আমার ছাত্র, আমি তাদের ভালোবাসি এবং প্রয়োজনে শাসন করি। তবে বেত্রাঘাত করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা চলছে।”
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইএইচ