ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র প্রভাবে ভোলায় ২৫টি গ্রাম প্লাবিত, ভেঙেছে বেড়িবাঁধ

ভোলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৫, ০৭:২২ পিএম
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র প্রভাবে ভোলায় ২৫টি গ্রাম প্লাবিত, ভেঙেছে বেড়িবাঁধ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'শক্তি'র প্রভাবে জোয়ার ও প্রবল বৃষ্টিতে ভোলায় ডুবে গেছে অন্তত ২৫টি গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার কয়েক হাজার মানুষ। 

ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে গরু-ছাগলসহ গৃহপালিত পশু, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও কৃষিজমি। তবে এখন পর্যন্ত প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। ফলে উত্তাল হয়ে ওঠে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী। এর জেরে বেড়িবাঁধ ভেঙে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর, পশ্চিম ইলিশা, পূর্ব ইলিশা, কাঁচিয়া ইউনিয়নসহ দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ও চরপাতা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।

বিকেলে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে তজুমদ্দিন উপজেলার নির্মাণাধীন জলকপাট (স্লুইসগেট), বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাকিমুদ্দিন বেড়িবাঁধ এবং লালমোহন উপজেলার মঙ্গল শিকদার বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে হাটবাজার, বাসাবাড়ি এবং রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়।

চরফ্যাশনের খেজুরগাছিয়া বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ায় হাজারীগঞ্জ ও জাহানপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়েছেন। চর কুকরি-মুকরি, ঢালচর ও চরপাতিলা এলাকায় পাঁচ ফুট পর্যন্ত পানিতে প্লাবিত হয় চরাঞ্চল। বহু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।

মনপুরা, তজুমদ্দিন ও চর জহিরউদ্দিনেও বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর জলোচ্ছ্বাসে একাধিক বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। দুর্বল বাঁধ ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি দ্রুত সরছে না বলে জানান স্থানীয়রা।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, মেঘনার জোয়ার বিকেলে বিপৎসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ঢেউয়ের আঘাতে তজুমদ্দিনের স্লুইসগেট এলাকার নির্মাণাধীন রিং বাঁধের ১০ মিটার অংশ ছুটে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। তবে পানি খালে চলে যাওয়ায় ঘরবাড়ি বা ফসলের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বাঁধ সংস্কারে ইতোমধ্যে জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।

ভোলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এখনো ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃহস্পতিবার থেকে ভোলার সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সব ধরনের লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হলেও শুক্রবার সকালে স্বাভাবিক হয় নৌযান চলাচল। ভোলায় পৌঁছেছে যাত্রী ও যানবাহনবাহী দুটি ফেরি—‘সুফিয়া কামাল’ ও ‘বেগম রোকেয়া’।

ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলার ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১৪টি মাটির কেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মাঠে রয়েছে সিপিপি ও রেড ক্রিসেন্টের ১৩ হাজার ৮০০ স্বেচ্ছাসেবক এবং ৯৭টি মেডিকেল টিম। পাশাপাশি সব সরকারি কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং শুকনা খাবার, শিশু খাদ্য ও চাল মজুত রাখা হয়েছে। উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজন সরিয়ে আনার কাজ চলমান রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “তজুমদ্দিন উপজেলার শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানি সরাসরি খালে ঢুকে পড়ায় বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছি। তবে রাতের জোয়ারেও যদি একই অবস্থা থাকে, তাহলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।”

ইএইচ