সামান্য চাপেই উঠে যাচ্ছে শরীয়তপুর-মাদারীপুর সড়কে দেওয়া নতুন পিচ। অনেক জায়গায় তৈরি হচ্ছে গর্ত, যা দ্রুতই সড়কটিকে ফিরিয়ে নিচ্ছে পূর্বের জীর্ণ অবস্থায়।
সম্প্রতি কাশিপুর এলাকায় সিলকোট দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই এমন চিত্র ধরা পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ—নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এমন অনিয়মের ভিডিও ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের বাধা দেন ঠিকাদারের লোকজন।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের যোগাযোগ রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয় শরীয়তপুর-মাদারীপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক। এই সড়কের টেকেরহাট টুমচর ব্রিজ থেকে আংগারিয়া বাইপাস পর্যন্ত অংশে দীর্ঘদিন ধরেই অসংখ্য গর্ত ও ভাঙাচোরা অবস্থায় ছিল।
এ অবস্থায় সড়ক বিভাগ ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১,৬০০ মিটার রাস্তার সংস্কার কাজের উদ্যোগ নেয়। কাজটি পায় ‘এমডি মঈনুদ্দিন বাসী’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি তারা সিলকোট দেওয়ার কাজ শুরু করে, তবে কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, মাত্র সাত দিন আগে সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হয়। কিন্তু শুরু থেকেই অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সঠিক অনুপাতে বিটুমিন না মেশানোয় বৃষ্টিতে দুই দিনের মাথায়ই উঠে যাচ্ছে পিচ। এতে কাজের মান নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
মাদারীপুর থেকে প্রতিদিন শরীয়তপুরে যাতায়াতকারী এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, "কয়েকদিন আগে সড়কটিতে সংস্কার কাজ শুরু হয়, কিন্তু একদিনের বৃষ্টিতেই পিচ উঠে গেছে। বর্ষা মৌসুম ঠিকমতো শুরু না হতেই এই অবস্থা হলে সামনে কী হবে? রাস্তা ভালো না হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, উন্নয়নও সম্ভব নয়। আমরা চাই টেকসই সংস্কার কাজ হোক।"
স্থানীয় ভ্যানচালক আব্দুর রহিম বলেন, “আজ তিনদিন হইছে রাস্তার কাম হইছে। কিন্তু এখনই পিচ উঠে যাইতাছে। কইলে কি হইবো? তারা তো তাগো মতোন কাম কইরা চইলা যাইবো। আমরা গরিব মানুষ, রাস্তার কামডা ভালো হোক এই চাই।”
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসান সরদার বলেন, "পিচ তো দেয়ার আগেই উঠে গেছে। এই কাজ কইরা লাভ কি? সরকারের কাছে আবেদন, যেন ভালোভাবে রাস্তা করে দেয়।"
বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন 'জেলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন'-এর আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির।
তিনি বলেন, "প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে করা এই সড়কের সংস্কার এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে গাড়ির চাপে পিচ উঠে যাচ্ছে। কাজের মান ও স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।"
এদিকে অনিয়মের ভিডিও ধারণ করতে গেলে সাংবাদিককে বাধা দেন ঠিকাদারের লোকজন। মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেকে স্থানীয় বাসিন্দা দাবি করলেও পরে জানান, তিনি ঠিকাদারের পক্ষের লোক এবং সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান রাসেল বলেন, “সড়কটিতে সিলকোট দেওয়া হচ্ছে। তবে নিচের বেড যেখানে দুর্বল, সেখানে বৃষ্টির কারণে ক্ষতি হয়েছে। যেহেতু কাজ চলমান, ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো পুনরায় সংস্কার করা হবে।”
ইএইচ