ঈদুল আজহার আর মাত্র ক’দিন বাকি। কোরবানির প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অভয়নগর উপজেলার কামারশালাগুলোতে এখন টগবগ করে ফুটছে কয়লার চুলা, ধ্বনিত হচ্ছে হাতুড়ির টুংটাং শব্দ। ছুরি, বটি, দা, চাপাতি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারশিল্পীরা।
বুধবার (৪ জুন) সকালে উপজেলার তালতলা, বেঙ্গল গেট, প্রেমবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কামাররা পুড়িয়ে লাল করা লোহার টুকরো ছাঁইয়ের ভেতর থেকে তুলে ঝালিয়ে নিচ্ছেন, আবার কেউ পুরোনো দা-বটি শানে ধার দিচ্ছেন। ঈদকে সামনে রেখে দম ফেলার ফুরসত নেই কারও।
তালতলা এলাকার কামার সোহাগ কর্মকার জানান, ‘কয়লা সংকটের পাশাপাশি লোহা ও ইস্পাতের দাম বেড়েছে। তবু ঈদের সময়টাতে কাজের চাপ বাড়ে। শানের কাজ বেশি হচ্ছে এখন। দিন-রাত কাজ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছি না।’
বেঙ্গল গেট এলাকার সুমন কর্মকার বলেন, এই পেশায় নতুন কেউ আসতে চায় না। অভিজ্ঞ কারিগর নেই বললেই চলে। ঘাট থেকে লেবার এনে কাজ চালাতে হচ্ছে। এবার চায়না স্টিলের জিনিসপত্র কিনছে অনেকে, তবে আমরা দেশি লোহায় মানসম্মত সরঞ্জাম দিচ্ছি।
তাঁরা আরও জানান, এখন ছুরি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়, বটি ৩০০ থেকে ৫০০, দা ৫০০ থেকে ৬০০ এবং চাপাতি ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায়। যদিও ক্রেতাদের অভিযোগ, অন্য বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি।
কামারশিল্পীরা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে এই প্রাচীন শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব। কারণ অভিজ্ঞ কারিগরের অভাব এবং কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি—দুটি সমস্যা একসঙ্গেই মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাঁদের।
চোখেমুখে ক্লান্তি থাকলেও ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততার মাঝে খুশি কামাররা। কারণ এই সময়টায় তাঁদের কামারশালাতেই তৈরি হয় কোরবানির জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো। ঈদের প্রস্তুতির অদৃশ্য নায়ক যেন তাঁরাই—যাঁদের হাতের ঘাম মিশে থাকে প্রতিটি ধারালো অস্ত্রে।
বিআরইউ