দখলের মুখে মাগুরার ঐতিহ্যবাহী নোমানী ময়দান

মিরাজ আহমেদ, মাগুরা প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৫, ০৩:২৫ পিএম
দখলের মুখে মাগুরার ঐতিহ্যবাহী নোমানী ময়দান

মাগুরার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নোমানী ময়দান আজ দখলের হুমকিতে। এক সময় যেখানে হাজারো মানুষ একত্রিত হতো ঈদের জামাত, রাজনৈতিক সমাবেশ, শহীদদের জানাজা ও নানা সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে, সেই মাঠটিই এখন একের পর এক অবৈধ দোকানে ভরে উঠছে। নেই ট্রেড লাইসেন্স, নেই প্রশাসনের অনুমোদন। সরকারি জমির বুকে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অবৈধ দোকানঘর।

স্থানীয়দের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই বছরের মধ্যেই পুরো মাঠটি চলে যাবে দখলদারদের কবলে।

মাগুরা জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষের কাছে নোমানী ময়দান শুধুই একটি খালি জায়গা নয়—এটি শহরের ফুসফুস, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতিধারক। এখানেই হয় বিশাল ঈদের জামাত, শহীদদের জানাজা, আন্দোলনের জনসভা। অথচ আজ সেই মাঠের ঐতিহ্য হারানোর মুখে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, বহিরাগত একটি চক্র মাঠের এক কোণে দোকান তোলার মাধ্যমে দখলের শুরু করে। পরে দোকানের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। কেউ কেউ অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছে, কেউ পাটাতন ও টিন দিয়ে স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তুলেছে।

এই দোকানগুলোর নেই কোনো ট্রেড লাইসেন্স, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য—যার বেশিরভাগই শিশু-কিশোরদের লক্ষ্য করে।

একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার ছেলে প্রতিদিন ওই দোকান থেকে পচা সিঙ্গারা, পিজ্জা, চিপস, জুস খেয়ে বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বলার কেউ নেই।”

মাগুরা জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “বিষয়টি আমাদের জানা আছে। একাধিকবার উচ্ছেদ করেছি, কিন্তু কিছু লোক আবার রাতের আঁধারে দখল করে। আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

মাগুরা পৌরসভার প্রশাসক আব্দুল কাদের বলেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপরিসর। যারা সরকারি জমি দখল করছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অনুমোদনহীন দোকান উচ্ছেদ করা হবে।”

জেলা পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা জানান, “জেলা প্রশাসনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে এলাকায় নিয়মিত টহল বাড়ানো হবে।”

সচেতন নাগরিক সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা বলছেন, “নোমানী ময়দান শুধু একটি মাঠ নয়—এটি মাগুরার আত্মার অংশ। একে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মাঠটি দখলমুক্ত করতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।”

মাঠ রক্ষায় ‘আমরা মাগুরাবাসী’ নামক একটি স্থানীয় সংগঠন গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

ইএইচ