ভোলার তজুমদ্দিনে চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মামলার এজাহারে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের তিন নেতার নাম উঠে আসায় ছাত্রদল ও শ্রমিকদল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
তবে স্থানীয় নেতারা এ বহিষ্কারের যৌক্তিকতা এবং ঘটনাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, ঘটনার পর সন্ধ্যায় তাদের ঘটনাস্থল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অপমান ও মানসিক চাপে তার প্রথম স্ত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয় বাজারে গিয়ে উপস্থিত লোকজনের কাছে সাহায্য চাইলে উপস্থিত সাংবাদিকদের সহায়তায় তারা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন।
স্থানীয় সাংবাদিক সাদির হোসেন রাহিম আমার সংবাদকে বলেন, “রোববার সন্ধ্যায় স্থানীয় বাজারে লোকজন জড়ো হতে দেখে আমি, আমার সংবাদ প্রতিনিধি ইলিয়াস সানি ও আনন্দ টিভির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম সাকিব ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে জানতে পারি, এক নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এবং তার স্বামীসহ স্থানীয়রা তাকে বাজারে এনেছেন।”
সাংবাদিকদের পরামর্শে ভুক্তভোগী দম্পতি ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে তাদের থানায় নিয়ে যায়। পরে তারা সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
তজুমদ্দিন থানার ওসি মোহাব্বত খান আমার সংবাদকে জানান, “অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে সত্য ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মামলার তিন নম্বর আসামি (ভুক্তভোগীর দ্বিতীয় স্ত্রী) গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
মামলার বাদী নিজেকে বিএনপির কর্মী দাবি করে বলেন, অভিযুক্তরা সবাই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে জড়িত। মূল নেতৃত্বে ছিলেন তজুমদ্দিন উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন।
তজুমদ্দিন থানা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা মিন্টু আমার সংবাদকে জানান, “ফরিদ উদ্দিনকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যেই অপরাধী হোক, দল তার পক্ষ নেবে না।”
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে জানায়, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রাসেল ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জয়নাল আবেদীন সজীবকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে বিবৃতিতে ধর্ষণের ঘটনার বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি।
তজুমদ্দিন ছাত্রদলের আহ্বায়ক মামুন বলেন, “এজাহারে যে রাসেলের নাম এসেছে, তিনি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক নন। প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”
স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি, একটি কুচক্রী মহল ইচ্ছাকৃতভাবে বিএনপি ও ছাত্রদলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়। কেন্দ্রীয়ভাবে হয়তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তবে তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।
ওসি মোহাব্বত খান বলেন, “আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় নয়, আমাদের কাছে অপরাধই মুখ্য। সুষ্ঠু তদন্ত চলছে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা, ক্ষোভ ও রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। জনমনে প্রশ্ন—দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে কি প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পাবে? নাকি রাজনৈতিক চাপের মুখে বিচার বাধাগ্রস্ত হবে?
ইএইচ