বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনও মুজিবনগরে আসেননি। তাহলে কেন এই এলাকার নাম মুজিবনগর রাখা হলো? মুজিবনগরের পূর্ব নাম ছিল বৈদ্যনাথতলা। বৈদ্যনাথতলাতেই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠনের শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেক্ষেত্রে, বৈদ্যনাথতলার নাম ‘মুক্তিপুর’ বা ‘মুক্তিনগর’ কেন রাখা হলো না—এই প্রশ্ন রাখলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
শনিবার দুপুরে গাংনী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে দলীয় নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে। বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সবাই ন্যায্য অধিকার নিয়ে বসবাস করবে—এটাই আমাদের লক্ষ্য। কেউ বঞ্চিত হবে না। আমরা এই তত্ত্বে এবং এই কর্মে বিশ্বাস করি।
কিন্তু আমরা জানি, গত ১৬ বছরে এমন একটি শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল যেখানে জনগণের অধিকারের ওপর জুলুম চলেছে। মানুষ কেবল ততটুকুই অধিকার পেত, যতটুকু দয়া করে দেওয়া হতো। একজন নাগরিকের কতটুকু অধিকার থাকবে, তা আরেকজন নির্ধারণ করত। এভাবেই গোটা দেশ একটি ফ্যাসিবাদী ও মাফিয়াচালিত শাসনের অধীনস্থ হয়ে পড়েছিল।
এই শাসকগোষ্ঠী শুধু আমাদের অধিকার কেড়ে নেয়নি, বরং নানাভাবে নিপীড়ন-নির্যাতনের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আমরা নিজেদেরকে নিয়মিত নাগরিক বলে ভাবতেই ভুলে গিয়েছিলাম। প্রতি পাঁচ বছর পর একটি নির্বাচনী নাটকের মধ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে বলা হতো—তারা বিজয়ী, তারা পাঁচ বছর থাকবে, তাদের রাজত্ব চলবে। এই ভয়াবহ বাস্তবতায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তখন মনে হতো, এই অবস্থার আর কখনও অবসান হবে না। দেশজুড়ে হতাশা ও অন্ধকার নেমে এসেছিল।
কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে বাস্তবতা আমাদের কল্পনাকে ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের জীবনে জুলাই-আগস্টের অভ্যর্থনার এক ঐতিহাসিক অধ্যায় সূচিত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল মুক্তি—পাকিস্তানি শাসন-শোষণ থেকে স্বাধীনতা অর্জন। এটি ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধ না হলে এই ভূখণ্ড আমাদের হতো না। সেই যুদ্ধ আজো মহিমায় উজ্জ্বল। একইভাবে, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাও ছিল মুক্তির প্রতীক। এ দুটি ঘটনাই মুক্তির চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে এবং আমাদের জীবনে সমান গুরুত্বপূর্ণ।
সভা শুরুর আগে প্রধান অতিথি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং গত ৫৩ বছরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এছাড়াও, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে যারা জীবন উৎসর্গ করে মাফিয়া-ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটানোর পথ তৈরি করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি প্রায় ৩০ হাজার গুরুতর আহত ব্যক্তির দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ।
সভা সঞ্চালনা করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন— জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল হক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গাংনী শাখার প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান, গাংনী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার শামসুল আলম সোনা, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু, জাতীয় যুব শক্তির সংগঠক মুজাহিদুল ইসলাম, গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, ১ নম্বর কাথুলী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ, বামন্দি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান শাহ আলম, বাঁশবাড়িয়া টেকনিক্যাল কলেজ অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্টের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ স্বপন, গাংনী আলিয়া মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট আহসান হাবীব, গাংনী দারুচ্ছালাম জামে মসজিদের ইমাম রুহুল আমিন, গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জুলফিকার আলী কানুন, গাংনী প্রেসক্লাবের সভাপতি তৌহিদ উদ দোলা রেজা, এবং গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সালাউদ্দিন শাওন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথিকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
ইএইচ