দুর্গম পাহাড় পেরিয়ে রাবির আইন বিভাগে, এবার কী হবে ছাইনুমের?

লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০১:৫১ পিএম
দুর্গম পাহাড় পেরিয়ে রাবির আইন বিভাগে, এবার কী হবে ছাইনুমের?

বান্দরবানের দুর্গম ফাইতংয়ের ভাজাপাড়া গ্রামের মেয়ে ছাইনুমে মারমা। অসংখ্য বাধা পেরিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগে ভর্তি হয়ে দেখিয়েছেন— ইচ্ছা আর মেধার কাছে পাহাড় কিছুই নয়। তবে এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘অর্থনৈতিক সংকট’। বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকে থাকার লড়াইটাই হয়ে উঠেছে তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন লড়াই।

ছাইনুমে মারমা লামা উপজেলার দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই কষ্ট আর সংগ্রাম তার নিত্যসঙ্গী। খেয়ে না খেয়ে, পায়ে হেঁটে পাহাড়ি পথ পার হয়ে স্কুলে যেতেন তিনি। ২০২২ সালে হারবাং শাক্যমুনি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে ও ২০২৪ সালে বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ অর্জন করে এলাকায় সাড়া ফেলেন তিনি।

ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজের পছন্দের বিষয় আইন পড়ার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হন রাবিতে। কিন্তু বাসা ভাড়া, খাবার, যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ চালিয়ে যাওয়া তার পরিবারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ছাইনুমে বলেন, ‘আমি চাই আইনজীবী হয়ে পার্বত্য অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু টাকার অভাবে আমার পড়াশোনাই অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। এখন যদি সহায়তা না পাই, হয়তো পড়ালেখাই বন্ধ হয়ে যাবে।’

তার বাবা থোয়াহ্লাখই মারমা বলেন, ‘ক্ষেতে কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালাই। মেয়েকে এত দূর এনেছি, এখন আর পারছি না।’

ছাইনুমে তিন ভাইবোনের মধ্যে মেঝো। বড় ভাইও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে পড়ছেন। ছোট বোনের পড়াশোনা আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হাসান বলেন, ‘ছাইনুমে ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী। ও যদি সাহায্য পায়, একদিন সমাজের গর্ব হবে। আমাদের মতো এলাকার সন্তানদের জন্য এটা একটা বড় উদাহরণ।’

ছাইনুমের মতো শিক্ষার্থীরা যদি সমাজিক সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়, তবে পাহাড়ের সম্ভাবনা অন্ধকারেই হারিয়ে যাবে— এমনটাই মনে করছেন শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল।

বিআরইউ