বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামী সংগীত পরিবেশক দল ‘কলরব’ এখন কেবল সংগীতের নাম নয়, বরং এক চরম বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবার অভিযোগ করেছে, কলরবকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত কোটি টাকার একটি দুর্নীতির সাম্রাজ্য।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলা হয়।
সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদের বড় ভাই মো. শামসুল আলম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আজাদের স্ত্রী উম্মে হাবিবা, শ্বশুর গোলাম নবী, ছেলে গালিব বিন আজাদ, বড় মামা সাইফুল ইসলাম ও ছোট মামা শহিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে শামসুল আলম বলেন, “কলরব ছিল আমার ভাইয়ের হৃদয়ের সংগঠন, যেটিকে তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গড়ে তুলেছেন নিষ্ঠা ও পরিশ্রমে। কিন্তু আজ সেই সংগঠনটি বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হাতে পড়ে লুটপাটের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর মোবাইল ফোনে কলার টিউন ও রিংব্যাক টিউন হিসেবে কলরবের গজল ব্যবহারে বিপুল অর্থ আয় শুরু হয়। কিন্তু তার পরিবার সে আয়ের কোনো অংশ পায়নি। বরং সংগঠনের সমস্ত মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণ কৌশলে নিজের দখলে নেন বদরুজ্জামান।”
সংগঠনের নামে প্রাপ্ত স্পন্সর, অনুদান, কনটেন্ট আয়ের সব অর্থ জমা হয় এখন বদরুজ্জামানের মালিকানাধীন ‘হলিটিউন’ নামক প্রতিষ্ঠানের নামে— এমন অভিযোগও করেন তারা।
আজাদের স্ত্রী উম্মে হাবিবা বলেন, “আমার সন্তানরা আজ এতিম, কলরবের প্রতিষ্ঠাতার উত্তরসূরি হয়েও তারা কোনো সম্মান বা সুবিধা পাচ্ছে না। অথচ একসময় অফিস বয়ের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরাই এখন ফ্ল্যাট, গাড়ি ও প্রোডাকশন হাউজের মালিক।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কলরবের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক বদরুজ্জামান ও প্রধান পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌস শুধুমাত্র অর্থ আত্মসাৎই করেননি, বরং প্রতিষ্ঠাতার স্মৃতি, সুনাম ও শ্রমও ব্যবহার করেছেন নিজেদের স্বার্থে। সংগঠনের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের নাম পরিবর্তন করে ‘হলিটিউন’ করে ফেলা হয়েছে। আয়ের হিসাব গোপন রাখা হয়েছে এবং সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মাসোহারা, উপহার ও হুমকির মাধ্যমে সদস্যদের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠে।
পরিবারের দাবি, প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের অনেক সদস্য এখন সংগঠন থেকে বিদায় নিয়েছেন বা চুপ থাকতে বাধ্য হয়েছেন। যারা প্রতিবাদ করেছেন, তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ মোবাইল ফোন কোম্পানি, কর্পোরেট স্পন্সর, ইউটিউব ও ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংগঠনের আয় বছরে বছরে বেড়েছে, কিন্তু কোনো স্থায়ী সম্পদ তৈরি হয়নি। বরং বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠরা হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, ২০০৪ সালে কলরব ইসলামী শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন আইনুদ্দীন আল আজাদ। ২০১০ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। এরপর থেকে সংগঠনটি পরিচালনা করছেন বদরুজ্জামান ও রশিদ আহম্মদ ফেরদৌস।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের আয়ে আজাদের পরিবারকে অংশ দেওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে তারা কিছুই পাননি। বরং কৌশলে কলরবের সম্পদ আত্মসাৎ করে নিজেদের নামে করে নিয়েছেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।
পরিবারের অভিযোগ, ইউটিউব, ব্রাইট সলিউশন মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড ও হলিটিউনসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্রবাসি সিটি, হেলিকপ্টার ও বিভিন্ন ব্যবসায় শীর্ষ মালিকানা গড়ে তুলেছেন বদরুজ্জামান। অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠাতার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে, সন্তানরা আর্থিক কষ্টে ভুগছে।
ইএইচ