মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, খাদ্য নিরাপদ কিনা তাও নিশ্চিত করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, খামারিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি নিরাপদ আমিষ উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে।
রোববার সকালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) আয়োজিত বরিশাল বিভাগের অগ্রগতি পর্যালোচনা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালাটি বরিশালের হোটেল গ্র্যান্ড পার্কের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়।
রোগ প্রতিরোধের ওপর গুরুত্বারোপ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “হাসপাতাল বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই, যদি আমরা খাদ্য নিরাপদ রাখতে না পারি।” তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্যের মাধ্যমে শুধুমাত্র খাদ্য সংকট নয়, স্বাস্থ্য সমস্যাও সমাধান সম্ভব। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দুধ উৎপাদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে দুধের সামগ্রিক উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে এবং এখনও আমদানি করতে হয়। এলডিডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ালে আমিষ ও প্রাণিজ খাদ্যের ঘাটতি পূরণ হবে। প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে দুধ আমদানি বন্ধ করা সম্ভব এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বরিশাল বিভাগের প্রাণিসম্পদ সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি ও বিশেষ করে মহিষ পালনের বড় সুযোগ রয়েছে। ভোলা জেলায় মহিষের বাথান দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তিনি আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির লক্ষ্যে মহিষের দুধ উৎপাদন ও লালন-পালন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, প্রাণিজ আমিষ বিশেষ করে দুধ ও ডিম শিশুদের জন্য অপরিহার্য। প্রকল্পের আওতায় স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ২০০ মি.লি. দুধ সরবরাহ করা হচ্ছে, যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শারীরিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিদ্যুৎ বিল কৃষি খাতের মতো প্রদানের উদ্যোগ চলছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, দানাদার খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ঘাস উৎপাদন বাড়ালে উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
নারী খামারিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পশু পালনে নারীদের আরও সমৃদ্ধ হতে হবে এবং প্রকল্পের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শুধু চাকুরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে যেমন তারা দেশের চরিত্র বদলে দিয়েছে, তেমনি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান সভাপতিত্বে কর্মশালায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, অধিদপ্তরের পরিচালকবৃন্দসহ জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং এলডিডিপি প্রকল্পের প্রডিউসার গ্রুপ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক ড. মো. জসিম উদ্দিন। বরিশাল বিভাগে এলডিডিপির কার্যক্রম, সাফল্য, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন চীফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রব্বানী।
প্রকল্পের আওতায় চলমান কার্যক্রম, মাঠ পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ, দুগ্ধ ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের সুযোগ এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সমন্বিত আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালা শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা জেলা দুগ্ধ উন্নয়ন ও সহায়তা কেন্দ্র, ডেমো শেড, দুধের মূল্য সংযোজন ফার্ম এবং বাবুগঞ্জের রহমতপুর বাজারের ওয়েট মার্কেট পরিদর্শন করেন।