জেলা প্রশাসকের উদ্যোগ: চরাঞ্চলের নারীরা নকশিকাঁথা তৈরি করে স্বাবলম্বী

সাইফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৫, ০৫:০৯ পিএম
জেলা প্রশাসকের উদ্যোগ: চরাঞ্চলের নারীরা নকশিকাঁথা তৈরি করে স্বাবলম্বী

কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের যুব মহিলারা জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার উদ্যোগে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নকশিকাঁথা তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

সরাসরি পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা কুড়িগ্রামে যোগদানের পর নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ি ইউনিয়নের চর সবুজ পাড়ায় যান।

চরাঞ্চলের দুঃস্থ অবস্থা দেখে তিনি প্রায় অর্ধশত যুব মহিলাকে হস্তশিল্প ও সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন বিতরণ করেন, যাতে তারা নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারে।

প্রশিক্ষণের পর ওই মহিলারা এখন নিজের হাতের তৈরি নকশিকাঁথা প্রতি পিস ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। তাদের সফলতা দেখে চরাঞ্চলের আরও মহিলারা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে তারা নিজেদের উপার্জন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং অন্য নারীদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছেন।

চর সবুজ পাড়ার হস্তশিল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আয়েশা খাতুন বলেন, “আমার বয়স মাত্র ১৬ বছর বিয়ে হয়েছিল। এরপর শ্বশুরবাড়িতে রান্না ছাড়া অন্য কোনো কাজ করিনি। জেলা প্রশাসক স্যার যখন চরাঞ্চলে আসেন, আমাদের দারিদ্র্য দেখে সেলাই ও নকশিকাঁথার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন এবং সেলাই মেশিন বিতরণ করেন। প্রশিক্ষণ পেয়ে এখন আমি নকশিকাঁথা তৈরি করে প্রতি পিস ৫ হাজার টাকা বিক্রি করছি।”

আসমা বেগম বলেন, “আমি আগে কখনো সেলাই করতাম না। জেলা প্রশাসক স্যারের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেলাই মেশিন পেয়েছি। এখন সালোয়ার কামিজ সেলাইয়ের পাশাপাশি নকশিকাঁথাও তৈরি করছি। এর মাধ্যমে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি, সংসারে অভাব নেই।”

জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, “নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ি ইউনিয়নের চর সবুজ পাড়ায় গিয়ে চরাঞ্চলের দুঃস্থ অবস্থায় আমি খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। তারপরই প্রায় অর্ধশত যুব মহিলাকে হস্তশিল্প ও সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন বিতরণ করি। আমি আনন্দিত যে তারা এখন নিজে নকশিকাঁথা তৈরি করে প্রতি পিস ৫ হাজার টাকা বিক্রি করছে। তারা উদ্যোক্তা হয়ে দোকান খোলার চিন্তাও করছে। আমি এই চরে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা খোলার ব্যবস্থা এবং সহজ কিস্তিতে লোনের সুযোগ করানোর পরিকল্পনা করছি। আমি চাই, চরবাসীও সমতল এলাকার মানুষের মতো সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করুক।”

তিনি আরও জানান, “চরের নারীদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার, বেসরকারি এবং এনজিও সহযোগিতায় আরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নারীদের বেকারত্ব দূরীকরণে নিজেদের সচেষ্ট হতে হবে। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। এনজিও ও দাতা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান, তারা যেন চরাঞ্চলের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়।”

ইএইচ