নেত্রকোণায় আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, কৃষকদের ব্যস্ততা

গোলাম কিবরিয়া সোহেল, নেত্রকোণা প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০১:৫৪ পিএম
নেত্রকোণায় আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, কৃষকদের ব্যস্ততা

চলতি আমন মওসুমে নেত্রকোণা জেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯ শত হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৮ শত ৯৫ মেট্রিক টন।

রোপা আমন আবাদ মওসুম শুরু হলেও প্রথম দিকে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা আমন আবাদ নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় থাকলেও গত দু সপ্তাহ ধরে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকরা মনের আনন্দে বীজ তলা তৈরি, জমিতে চাষাবাদ ও ধান রোপনে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলায় এ বছর আমনের অধিক ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা।  

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলার একাধিক গ্রাম ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বীজ তলায় আমন ধানের চারা বড় হওয়ার সাথে সাথে তা রোপণ করার জন্যে জমি প্রস্তুত রাখতে হয়। এজন্য জমিতে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন হয়। আমন ধান চাষাবাদ করতে প্রাকৃতিক পানির উৎস্য বৃষ্টির উপর কৃষকদের নির্ভর করতে হয়। এতে করে কৃষকরা সেচ খরচ থেকে রেহাই পান। গত দুই সপ্তাহে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত হওয়ায় জমিতে পর্যাপ্ত পানি জমায় কৃষকরা মনের আনন্দে জমিতে আমন আবাদ করছে। কৃষকরা ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ কেউ আগাছা পরিষ্কার আবার অনেকে সম্পূর্ণ ক্ষেত প্রস্তুত করে দলবদ্ধ হয়ে আমন ধানের চারা রোপণ করছেন।

জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে ৪ উপজেলা হাওর অধ্যুষিত। বর্ষা মওসুমে হাওরাঞ্চলের বেশির ভাগ জমিই পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। ফলে এসব হাওরাঞ্চলের জমিতে আমন ধান চাষ করা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ কৃষকেরই নিজস্ব ট্রাক্টর না থাকায় তারা কাঠা প্রতি একটি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে অন্যের ট্রাক্টর দিয়ে নিজের জমি চাষ করাতে হচ্ছে। চলতি আমন মৌসুমে সেচের খরচ না থাকলেও রয়েছে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত শ্রমিকের সংকট। গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো কৃষি শ্রমিক পাওয়া যায় না। ফলে শ্রমিকদের বেশি টাকা মজুরি দিয়ে আমন ধান রোপণ করা হচ্ছে। স্থান বেধে তাদেরকে মজুরি দিতে হচ্ছে কাঠা প্রতি পাঁচ শত থেকে ছয় শত টাকা। জেলার কৃষকরা দেশি ধানের পরিবর্তে এখন হাইব্রিড জাতের ধান চাষে বেশি আগ্রহী।

জেলার আটপাড়া উপজেলার রূপ চন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক আকিকুর রেজা খান খোকন জানান, তিনি এ বছর ৩০ কাঠা জমিতে আমন ধানের চাষ করবেন।  ইতিমধ্যে ১০ কাঠা জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন। বীজ ধান, সার, কীটনাশকের দাম ও কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় ধান চাষের খরচ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে।

কেন্দুয়া উপজেলার দুল্লী গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া বলেন, সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচের টাকা বাদ দিয়ে কাঠা প্রতি ধান উৎপাদন করে তেমন লাভ হয় না। অনেক সময় খরচের পরিমাণ আর উৎপাদিত ধানের বাজার মূল্য প্রায় সমান হয়ে যায়। ফলে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। সহজ শর্তে কৃষি ঋণ, প্রণোদনা, বীজ ও সার সহজলভ্য করা হলে কৃষকরা ধান চাষে আরো আগ্রহী  হবে।

নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমার সংবাদকে জানান, ‘চলতি আমন মওসুমে নেত্রকোণা জেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯ শত হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৮ শত ৯৫ মেট্রিক টন। শনিবার পর্যন্ত জেলায় ৩৫ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চারা আবাদ করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রোপা আমন আবাদের কার্যক্রম চলবে। কৃষকরা যাতে জমিতে সুষম পরিমাণে সার ব্যবহার করতে পারে তার জন্যে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একজন করে বিসিআইসি ডিলার ও প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে একজন করে সাব ডিলার রয়েছে। তাদের নামে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার বরাদ্দ করা হয়েছে’।

জেএইচআর