ডলার সংকট কাটাতে সমন্বিত উদ্যোগ চান গভর্নর

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২২, ০৭:৪৯ পিএম
ডলার সংকট কাটাতে সমন্বিত উদ্যোগ চান গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, ডলারের অস্থিরতা কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিগত সহযাগিতা দিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোও অভিন্ন দামে ডলার লেনদেনে একমত হয়েছে। এভাবে সবাই একযোগে কাজ করতে পারলে করোনা সঙ্কটের মত ডলারের অস্থিরতাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। 

শনিবার (২৮ মে) রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সেলিম রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন। 

গভর্নর বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় ডলারের ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া দামের ভিন্নতা নিয়েও ব্যাংক ও খোলাবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কেন্দ্রিয় ব্যাংক সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নতুন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। বিদেশ ভ্রমনে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর প্রবাসী আয় বাড়াতে রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করা হয়েছে। করোনার পরে ডলারের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে জানিয়ে ফজলে কবির বলেন, করোনায় দেশের প্রায় সকল কার্যক্রম অনেকটা থমকে গিয়েছিল। কিন্তু ঝুঁকির মাঝেও ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু ছিল। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুত সময়ে স্বভাবাবিক হতে থাকে। অর্থনীতিও অনেকটা স্বল্প সময়ে ঘুরে দাঁড়ায়। তাই ডলার সমস্যাও থাকবে না। এ সংকট দ্রুতই কেটে যাবে। 

বাজার স্বাভাবিক রাখতে কেন্দ্রিয় ব্যাংক সহায়তা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব পণ্য (খাদ্য, শিশুখাদ্য, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রফতানিমুখী শিল্প এবং কৃষি খাত) মূল্যস্ফিতে বেশি প্রভাব ফেলে সেসব ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে সরাসরি সাপোর্ট দিচ্ছে। আর যেসব পণ্য মূল্যস্ফীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে না সেসব পণ্য আমদানির বিপরীতে ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি) নগদ মার্জিন বাড়ানো হয়েছে।’

গভর্নর বলেন, বর্তমানে বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়েও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এটা মোকাবিলায় পুরো ব্যাংক খাত একত্রে কাজ করবে। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যন্যা ব্যাংকগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে। আগামীতেও এ নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

করোনায় ব্যাংকিং খাতের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশ ২০২০ সালে প্রথম করোনার মুখোমুখি হয়। ওই সময়ে ব্যাংক খাত অসাধারণ কাজ করেছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে কিছু ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে কর্মরত ১৮৯ জন ব্যাংকার মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু ব্যাংক খাতের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয় নি।’

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সেলিম রহমান বলেন, আমরা নিয়মিত বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ড পালন করি। এর ধারাবাহিকতায় শিক্ষাবৃত্তি প্রদান কর্মসূচি পরিচালিত হয়। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যক্রম চলমান রাখা হবে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ফরমান আর চৌধুরী বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এ বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এবং দেশ ও জাতির কল্যানে কাজ করবে।

ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের আওতায় প্রতি বছর মেধাবীদের বৃত্তি দিয়ে আসছে। এর অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। আর  শিক্ষা খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতি বছর নতুন করে ২০০ মেধাবী শিক্ষার্থীকে স্নাতক পর্যায়ে চার বছরের জন্য এ বৃত্তি দেওয়া হয়। আর নতুন ও পুরোনো মিলে প্রতি বছর আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের বৃত্তি প্রদান কার্যক্রমের আওতায় মোট ৮০০ শিক্ষার্থীকে প্রায় ৪ কোটি টাকার বৃত্তি দেওয়া হবে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসে সাড়ে ৩ হাজার এবং শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ের জন্য প্রতি বছর এককালীন ৮ হাজার টাকা করে বৃত্তি পাবেন।


আরএইচ/ইএফ