মাঠে নামছেন চাকরিচ্যুত ব্যাংকাররা  

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক  প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২২, ০১:২৮ এএম
মাঠে নামছেন চাকরিচ্যুত ব্যাংকাররা  
ছবি-প্রতীকী

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা ও দ্বারে দ্বারে ঘুরেও চাকরি ফেরত না পাওয়ায় অবশেষে আন্দোলনে নামছেন চাকরিচ্যুত ব্যাংকাররা। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দেয়ার পর আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধনের ডাক দেয়া হয়েছে। 

মানববন্ধন প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকারদের সমন্বয়কারী জানান, করোনাকালে কর্মী ছাঁটাই না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক তাদের অনেক কর্মীকে চাকরি থেকে অন্যায়ভাবে পদত্যাগে বাধ্য, আবার কাউকে ছাঁটাই করেছে। অন্যায় চাকরিচ্যুতিতে ব্যাংকগুলোর উন্নয়নে অবদান রাখা কয়েক হাজার অভিজ্ঞ ব্যাংক কর্মকর্তা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

তিনি জানান, বেআইনিভাবে পদত্যাগে বাধ্য ও ছাঁটাই করা কর্মকর্তাদের বহালের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্তপূর্বক প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে সার্কুলার (বিআরপিডি সার্কুলার নং-২১, তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১) জারি করেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন করার পরও অনেক ব্যাংক তাদের কর্মীদের বহাল করছে না।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক তাগাদা দেয়ার পরও বেশির ভাগ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা সার্কুলার অনুযায়ী কর্মীদের বহালে বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ করছেন। এর প্রতিবাদে এবং অনতিবিলম্বে আবেদনকারী কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার সময় খরচ কমানোর নামে কর্মী ছাঁটাই করেছে অনেক ব্যাংক। আবার অভিনব কায়দায় অমানবিকভাবে অনেককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। 

এমন পরিস্থিতিতে ছাঁটাই বন্ধ ও কোভিডকালীন চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য হওয়া কর্মীদের চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু নির্দেশনার ৯ মাস পার হলেও চাকরি ফিরে পাননি বেশির ভাগ ভুক্তভোগী। বিষয়টি একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানো হলেও মেলেনি কোনো সমাধান। এমনকি পুনর্বহালের আশ্বাসও পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। 

করোনাকালে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য হন বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের এমন এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) জানান, অফিস চলাকালে হঠাৎ মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ (এইচআরডি) থেকে আমাকে বলা হয়, আপনাকে রিজাইন করতে হবে। কী কারণে, জানতে চাইলে কিছুই না বলে শুধু বলা হয়, ম্যানেজমেন্টের নির্দেশ। 

রিজাইন না দেয়ায় কয়েক দিন পর ফের আমাকে ডেকে নিয়ে বলা হয়, রিজাইন কেন করছি না। কারণ জানতে চাইলে রুমের দরজা বন্ধ করে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়। ওই সময় কারও সাথে যেন যোগাযোগ করতে না পারি সে জন্য মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয়া হয়। পরে জোরপূর্বক রিজাইন পেপারে সই করানো হয়। এভাবে শত শত ব্যাংকারকে কোনো কারণ ছাড়াই পদত্যাগ করতে হয়েছে মহামারির সময়। 

ছাঁটাই ও পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংকাররা জানান, গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাকরিতে পুনর্বহালে নির্দেশনা দিয়েছে। ৯ মাস হয়ে গেছে কিন্তু পুনর্বহালে নির্দেশনা পরিপালনে গড়িমসি করছে ব্যাংকগুলো। এমনকি চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে তেমন কোনো আশ্বাসও দেয়া হচ্ছে না। সর্বশেষ বিষয়টি জানিয়ে গত ২৫ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 

প্রসঙ্গত, ব্যাংকারদের অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর বেসরকারি খাতের ছয়টি ব্যাংকে কর্মী ছাঁটাই বিষয়ে বিশেষ পরিদর্শনে নামে। পরিদর্শনে দেখা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই ব্যাংকগুলোর মোট তিন হাজার ৩১৩ জন কর্মকর্তা ‘স্বেচ্ছায়’ চাকরি ছেড়েছেন। এরমধ্যে বয়স থাকার পরও স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দেখানো হয়েছে তিন হাজার ৭০ জনকে। 

এছাড়া ২০১ জনকে অপসারণ, ৩০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও ১২ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দেখানো বেশির ভাগই জানিয়েছেন, পদত্যাগের জন্য মৌখিকভাবে তাদের একটি সময় দেয়া হয়েছিল। ওই তারিখের মধ্যে পদত্যাগ না করলে কোনো সুবিধা দেয়া হবে না— এ ভয় দেখানো হয়। এমন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাধ্য হয়ে তারা পদত্যাগ করেন। 

এরপরই ব্যাংক কর্মীদের ছাঁটাই বন্ধে গত ১৬ সেপ্টেম্বর নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, এখন থেকে সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না। পাশাপাশি মহামারি কোভিডকালীন চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংককর্মীদের চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়া হয়।