ইসলামী ব্যাংকের ঋণজালিয়াতির বিষয়ে তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২২, ০৩:৪১ পিএম
ইসলামী ব্যাংকের ঋণজালিয়াতির বিষয়ে তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটির বেশি হলেই নীরিক্ষা
  • নাবিল গ্রুপের নামে ঋণ ছাড় স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
  • খোঁজা হচ্ছে ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অস্তিত্বহীন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল অঙ্কের ঋণ বের করে নেওয়ার বিষয়ে তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার (২৮ নভম্বের) দৈনিক আমার সংবাদে ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠানের খোলসে পাচার!’ তিনটি ব্যাংকের ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তাৎক্ষনিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিপুল অঙ্কের এসব ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী কারা- তা খতিয়ে দেখবে তদন্তদল। বিশেষত নাবিল গ্রুপের নামে অন্য কেউ টাকা সড়িয়েছে কি-না তার তদন্ত হবে। এ ছাড়া ৫০ কোটির বেশি সব ঋণ পর্যালোচনা করে দেখবে বিশেষ এই তদন্তদল।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে এ গ্রুপের বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে তা থেমে যায়। আমার সংবাদসহ কয়েকটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হলেও অদৃশ্য ইশারায় এড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন নতুন করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। আর আপাতত নাবিল গ্রুপের নামে ঋণছাড় স্থগিত রাখার মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীকেন্দ্রিক নাবিল গ্রুপের অনুকুলে সব মিলিয়ে ৭ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছে ইসলামী ব্যাংক। এর বাইরে সম্প্রতি অস্তিত্বহীন চারটি কোম্পানির নামে আরও ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ইসলামী ব্যাংকের অনুমোদিত ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। মুনাফাসহ এর বর্তমান দায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অন্যদিকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক গত জুনে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক গত মে মাসে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে নাবিলের স্বার্থসংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে। সব মিলিয়ে এ গ্রুপের নামে অনুমোদিত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চে তাদের ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অল্প সময়ের ব্যবধানে বিপুল অঙ্কের ঋণ বাড়ানোর বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের মালিকানায় থাকা কোনো পক্ষ বেনামে এসব ঋণ নিতে পারে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের পর্যালোচনার ভিত্তিতে গত সেপ্টেম্বরে বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য পরিদর্শন সংশ্নিষ্ট দুটি বিভাগে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে এলসি খুলে আরও ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি সড়িয়ে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল। সব মিলিয়ে তিনটি ব্যাংক থেকে মোট ৩০ হাজার কোটি টাকা সড়ানো হয়েছে। যার অধিকাংশ পাচার হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

এরই প্রেক্ষিতে গভর্নরের সাথে জরুরী বৈঠক করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। বৈঠকের পরপরই তদন্ত কমিঠি গঠন করা হয়। এরপর ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে জরুরিভাবে ডাকা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। গতকাল সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন অতিরিক্ত পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত দল ব্যাংকটির এমডির সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। অফিস ছুটির পর রাত অবধি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকেই ছিলেন।

তবে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে দিতে রাজি হননি বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জি এম আবুল কালাম আজাদ।


ইএফ