ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি চলছে। এই ছুটির সময় ব্যাংকগুলো বন্ধ থাকায় নগদ টাকা তোলার একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে এটিএম বুথ। তবে ঈদের এই দীর্ঘ ছুটিতে অধিকাংশ বুথে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা।
রাজধানীর বংশাল এলাকার বাসিন্দা রহমান বুধবার সকালে জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে যান ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি এটিএম বুথে। সেখানে গিয়ে দেখেন, মেশিনে কোনো টাকা নেই। এরপর আশপাশের আরও চারটি বুথ ঘুরেও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি। একপর্যায়ে নিরুপায় হয়ে এক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার নিতে বাধ্য হন।
তিনি বলেন, “আমি হাসপাতালে এক আত্মীয়কে ভর্তি করাতে যাচ্ছিলাম। নগদ টাকা দরকার ছিল। একের পর এক বুথ ঘুরেও টাকা তুলতে পারিনি। সময়টা খুবই সংকটপূর্ণ ছিল।”
ঈদের ছুটিতে ব্যাংক লেনদেন বন্ধ থাকায় গ্রাহকরা নির্ভর করছেন এটিএম বুথের ওপর। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বুথে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘নো ক্যাশ’ বা ‘আউট অব সার্ভিস’ সাইন।
ধানমণ্ডির একটি পোশাক কারখানার কর্মী রুনা আক্তার বলেন, “বোনকে জরুরি টাকা পাঠাতে কয়েকটি বুথে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত মিরপুরে গিয়ে টাকা তুলতে হয়েছে। এতে সময় ও খরচ—দুটোই বেড়েছে।”
এ পরিস্থিতির মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন আগাম প্রস্তুতির পরও এমন অব্যবস্থা?
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৯ মে এক সার্কুলারে দেশের সব তফসিলি ব্যাংককে ঈদ উপলক্ষে এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ সরবরাহের নির্দেশ দেয়। প্রতি বছরই ঈদের আগে এ ধরনের নির্দেশনা দিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যাতে বুথে সার্বক্ষণিক রিফিল নিশ্চিত করা হয়। তবে বাস্তবে তা বাস্তবায়ন হয় না বলেই অভিযোগ গ্রাহকদের।
বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এটিএম বুথ সাধারণত দুইভাবে পরিচালিত হয়—একটি শাখা-সংলগ্ন এবং অন্যটি স্বাধীন। শাখা–সংলগ্ন বুথগুলো সেই শাখা থেকেই পরিচালিত হয়। কিন্তু ঈদের ছুটিতে শাখাগুলো বন্ধ থাকায় এসব বুথে নতুন করে টাকা ভরার সুযোগ হয়নি। কিছু ব্যাংক সীমিত পরিসরে রিফিল টিম রাখলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল খুবই অপ্রতুল।
এছাড়া অনেক বুথে থাকা ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম)—যেখানে টাকা জমা ও উত্তোলন দুটোই সম্ভব—তাও তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। কারণ, একজন গ্রাহক টাকা জমা দেওয়ার পরপরই অপর গ্রাহক তা তুলে নিচ্ছেন। এতে চাপ বাড়ছে এবং পরিষেবা সীমিত হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আগে থেকেই নির্দেশনা দিয়েছি যেন প্রতিটি বুথে পর্যাপ্ত নগদ টাকা রাখা হয়। তবে অনেক ব্যাংক মাঠপর্যায়ে সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করছে না।”
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে প্রতিটি বুথে সার্বক্ষণিক নজরদারি এবং জরুরি ভিত্তিতে রিফিল টিম সক্রিয় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ইএইচ