ইউজিসি স্বর্ণপদক পাচ্ছে সিকৃবি শিক্ষক ড. মাহমুদুল

সিকৃবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২, ০২:৪১ পিএম
ইউজিসি স্বর্ণপদক পাচ্ছে সিকৃবি শিক্ষক ড. মাহমুদুল

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মৌলিক গবেষণামূলক বা পর্যালোচনামূলক প্রবন্ধ বা পুস্তক-এর জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রতি বছর ইউজিসি স্বর্ণপদক প্রদান করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় চিকিৎসা বিজ্ঞান শাখায় প্রকাশিত প্রবন্ধের জন্য ইউজিসি স্বর্ণপদক ২০১৯ -এ মনোনীত হয়েছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান।

প্রতি বছর পুস্তক ও গবেষণা প্রবন্ধ দুইটি বিভাগে ইউজিসি স্বর্ণপদক প্রদান করে থাকে। পুস্তক বিভাগের দুটি শাখায় মোট ৩ টি এবং খ্যাতিসম্পন্ন জার্নালে প্রকাশিত পির রিভিউ প্রবন্ধের জন্য ১৩ টি শাখায় মোট কুড়িটি সহ দুই বিভাগ মিলিয়ে ২৩ টি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এই পদক প্রদান করে থাকেন।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর প্রকাশিত মৌলিক গবেষণামূলক প্রকাশনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন স্বর্ণপদক প্রদানের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করে থাকে। কেবল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষক ইউজিসি স্বর্ণপদকের জন্য আবেদন করতে পারেন। যেখানে দেশীয় সমস্যা সম্পর্কিত এবং দেশের মধ্যে সম্পাদিত গবেষণা কর্মের প্রকাশনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

প্রবন্ধ বিভাগে প্রত্যেক স্বর্ণপদক প্রাপ্তকে নগদ ৭৫ হাজার এবং পুস্তক বিভাগে ১ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়াও প্রত্যেক পদকভূষিত ব্যক্তিকে ২২ ক্যারেট  মানের ১০ গ্রাম স্বর্ণ সম্বলিত একটি পদক প্রদান করা হয়ে থাকে।

ড. মাহমুদুল হাসান জানান, ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে প্রতি বছর ৩ থেকে ৫ মিলিয়ন মানুষ গুরুতর অসুস্থ এবং প্রায় ৬,৫০,০০০ মানুষ শ্বাসকষ্টের কারণে মৃত্যুবরণ করে থাকে। পাখিদের থেকে উদ্ভূত ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য দায়ী নতুন একটি ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা এ (এইচ৭এন৯) নিম্ন শ্বাস নালীর সংক্রমণ সহ তীব্র সংক্রমণে মৃত্যুও ঘটাতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা এ (এইচ৭এন৯) এর বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোনও প্রতিকার না থাকায় এর প্রতিরোধে কার্যকর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন অনেক জরুরী হয়ে পড়েছে। এখানে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা এ (এইচ৭এন ৯) এর বিরুদ্ধে কার্যকর মাল্টি-এপিটোপ বিশিষ্ট ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের জন্য জিনোম ভিত্তিক বিভিন্ন বায়োইনফরম্যাটিক্স পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়েছে৷ কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে ভ্যাকসিনের নকশা তৈরিতে সময় কম লাগতে পারে বলে এই প্রক্রিয়া ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।

এছাড়াও এই গবেষণায় সমস্ত জেনোমিক্স এবং ভাইরাসের প্রোটিনের সাথে মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করে কার্যকর ভ্যাকসিনের নকশা তৈরি করা হয়েছে৷ ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসা পেতে আমাদের গবেষণার অনুসন্ধানগুলো বিভিন্ন গবেষণাগারে গবেষকদের জন্য আরও মূল্যবান হতে পারে।

তিনি বলেন, এই পেপারটি একটি জার্নালে প্রকাশিত হয় যার ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ২.৯১ এবং এটি ইতিমধ্যে ৩৪ বার অন্যান্য গবেষণা প্রবন্ধে উদ্ধৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানী মহলে গবেষণাটির গ্রহণযোগ্যতা প্রতিফলিত করে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, এটি আমাদের কাজের সিকৃতি। আমরা স্বল্প পরিসরে অনেক প্রতিকূলতা নিয়ে কাজ শুরু করি। কিন্তু সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আমরা অন্তর্জাতিক মানের একটি গবেষণা করতে পারবো। এই সফলতার জন্য আমি আমার গবেষণা দলের সকলের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞ। এই সাফল্যকে তিনি সিকৃবির সাফল্য বলে উল্লেখ করেন।

ড. মাহমুদুল হাসান সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর ফার্মাসিউটিক্যালস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি বিভাগে কর্মরত। তিনি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এ মেধার স্বাক্ষর রাখেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান করে নেন। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে সফলতার সাথে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন।

গত কয়েক বছর ধরে তিনি কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে ভ্যাক্সিনের নকশা তৈরি, ওষুধ আবিষ্কার এবং গাঠনিক জীববিজ্ঞান এর উপর অসাধারণ গবেষণা করে আসছেন। তিনি ইউজিসি এবং বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা অনুদানের অর্থায়ানে বঙ্গোপসাগর সমুদ্র সৈকত থেকে সংগৃহীত সামুদ্রিক শৈবাল এর ওষুধী গুনাগন বিষয়েও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ইতিমধ্যেই স্কোপাস/ পাবমেড ইনডেক্সড জার্নালে ১২টি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল শিক্ষকদের মধ্যে থেকে সেরা প্রকশনা পুরস্কার ২০১৯ এর জন্য নির্বাচন করা হয়। এমনকি ২০১৭ সালে ইতালিতে অনুষ্ঠিতব্য সিস্টেম বায়োলজি এর কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কেন্দ্র থেকে তিনি বৃত্তিও লাভ করেন। বর্তমানে তার এইচ ইনডেক্স (Hindex) ৯.০ মোট প্রকাশনা ৩৫টি এবং গুগল স্কলার উদ্ধৃতি ৫৯৪টি। বর্তমানে তিনি আগামী যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জীব-পদার্থবিজ্ঞান ও গাঠনিক জীব বিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি রত আছেন।

এসএম