ঢাবিতে যত্রতত্র মূত্রত্যাগ: নষ্ট হচ্ছে ক্যাম্পাসের পরিবেশ

ঢাবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৩, ০৭:২৬ পিএম
ঢাবিতে যত্রতত্র মূত্রত্যাগ: নষ্ট হচ্ছে ক্যাম্পাসের পরিবেশ

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিদিনই হাজারো শিক্ষার্থী-বহিরাগত-বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষের পদভারে মুখরিত থাকে। তবে জনবহুলে স্থান হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন ব্যতীত নেই কোনো মোবাইল টয়লেট। আর এসব হল ও প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবনে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় প্রাকৃতিক কাজে সাড়া দিতে তারা বসে যান ফুটপাতেই। এতে নোংরা হয় পরিবেশ।

সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ফুলার রোড, টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর, পলাশি থেকে সলিমুল্লাহ হলের সামনের রাস্তা, জগন্নাথ হলের পিছনের রাস্তা, শামছুন নাহার হলের সামনের দিকে সহ বেশ কিছু জায়গায় যত্রতত্র মূত্রত্যাগ করে বহিরাগতরা। মাঝে মাঝে মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসের এসব জায়গায় মল ছড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়।

হল ও একাডেমিক ভবন ব্যতীত কোনো মোবাইল টয়লেট না থাকায় ক্যাম্পাসের রিকশা চালক, স্থায়ী অস্থায়ী দোকানদার, হকার, বহিরাগতরাও এসব জায়গায় মূত্রত্যাগ করে। এতে এসব ফুটপাতে হাটা অনেক কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে। গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশে, দূষিত হচ্ছে ঢাবি ক্যাম্পাস। দেয়াল ঘেঁষে মুত্রত্যাগের ফলে মূত্র পুরো ফুটপাতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাঁটতে বেগ পেতে হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে একাধিক গণশৌচাগার স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (৮ জানুয়ারি) প্রক্টর বরাবর গণশৌচাগার স্থাপনের জন্য লিখিত আবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী৷  এর আগে বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসের এমন কিছু স্থান দড়ি দিয়ে ঘেরাও করে দেন তাঁরা। একই সঙ্গে সেখানে জনসচেতনতামূলক পোস্টারও সাঁটিয়ে দেন তাঁরা। 
লিখিত আবেদনে বলা হয়, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণশৌচাগারের সংখ্যা খুবই নগণ্য। এর ফলে বহিরাগত ও রিকশাচালকেরা যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে ক্যাম্পাসের পরিবেশ অবর্ণনীয়ভাবে নষ্ট করে ফেলছেন। রাস্তায় যানজট আর ফুটপাতে প্রস্রাবের কারণে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে হাঁটাচলা করা একেবারেই দুরূহ হয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক গণশৌচাগার স্থাপন করা গেলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে।’

২য় বর্ষের শিক্ষার্থী তারিক বলেন, ‘ঢাবির পরিবেশ এত খারাপ এটা বাইরের কেউ বিশ্বাস করবে না, তবে বাস্তবতা ভিন্ন, এটা ঘটছে। কোনো শিক্ষার্থী এসব কাজ করে না, বহিরাগত আর রিকশা চালকরা এসব করে। আমরা ফুটপাত ধরে হাঁটতে পারি না। শরীর বাঁচাতে ফুটপাত এড়িয়ে আমরা রাস্তা দিয়ে হাঁটি। প্রশাসনের উচিত বহিরাগতদের নিষিদ্ধ করা এবং বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল টয়লেট স্থাপন করা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত রসিদ বলেন, ‘ঢাবিতে যত্রতত্র মূত্রত্যাগ দিনেদিনে মহামারীর আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে মেয়েদের হলগুলোর পাশে এই অবস্থা শোচনীয়। ক্যাম্পাসের মধ্যকার রিকশা গ্যারেজের পাশে একটি অস্থায়ী মূত্রত্যাগের জায়গা গড়ে উঠেছে অথচ প্রশাসনের কোনোপ্রকার ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রোক্টরিয়াল টিমের চোখের সামনে এ সব চললেও তারা কোনোপ্রকার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ। যতদ্রুত সম্ভব প্রশাসনের উচিত ক্যাম্পাসের সুস্থ পরিবেশ রক্ষায় এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।’

ঢাবি প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বেও  তিনটি গণশৌচাগার করা হয়েছিলো। তবে তাতে উপকারের চেয়ে অপকার হয়েছে। কেউ যথাযথ ব্যবহার না করায় জগন্নাথ হলের পাশে ও খেলার মাঠের পাশের দুটি রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গিয়েছিলো। এখন প্রশাসন শতবর্ষের পরিকল্পনায় এসব নিরসনে কাজ করছে। এসব জায়গায় যেনো কেউ প্রাকৃতিক কাজ না করে সে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা চলছে। জায়গাগুলো পরিষ্কার করে চলার উপযুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এআরএস