বশেমুরবিপ্রবিতে বাজেট বৃদ্ধি পেলেও প্রযুক্তি মান্ধাতার আমলের

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি : প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৪, ০৪:২২ পিএম
বশেমুরবিপ্রবিতে বাজেট বৃদ্ধি পেলেও প্রযুক্তি মান্ধাতার আমলের

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে চলেছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। সেই সাথে বেড়েছে বাজেটের পরিমাণ। কিন্তু সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বাজেট বাড়েনা গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)।

দেশের অন্যান্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে বাজেটের পরিমাণ থাকে আকাশচুম্বী; সে তুলনায় বশেমুরবিপ্রবিতে বাজেটের পরিমাণ তেমন একটা বৃদ্ধি পায়না। যতটুকু বৃদ্ধি পায় সেটা স্বল্প পরিমাণে ব্যবহার করা হয় প্রযুক্তি খাতে। আর বেশিরভাগ ব্যবহৃত হয় বেতন ও ভাতাদিতে।

গেলো বছরের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, চলতি বছরে(২০২৪-২৫অর্থবছরে) বাজেট বেড়েছে মাত্র ৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মোট বাজেটের পরিমাণ মাত্র  ৬৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। যা একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিতান্তই কম বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট কর্মকর্তা (সহকারী পরিচালক) তানিয়া ইসলাম থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে(২০২৪-২৫) মোট বাজেটের পরিমাণ ৬৩ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ৭ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি) থেকে প্রাপ্ত অর্থ ৫২কোটি ৫৩লক্ষ টাকা। অন্যদিকে গত অর্থবছরের প্রারম্ভিক স্থিতির পরিমাণ ছিল ২কোটি ৭২লক্ষ টাকা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সত্ত্বেও প্রযুক্তির কোনো বালাই দেখা যায় না এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। মান্ধাতার আমলের শ্রমিকদের দা, বটি, কাঁচি ব্যবহার করে পরিষ্কার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আগাছা। পুরোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং আধুনিকতার ছোঁয়ার বিপরীতে রয়েছে বশেমুরবিপ্রবি। যেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো হওয়ার কথা ছিল, সেখানে বশেমুরবিপ্রবি যে নিতান্তই সামান্য। ফলে শিক্ষার্থীরা নানা সময়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। প্রযুক্তির উন্নয়নে প্রশাসন যেন বিমুখী আচরণ করে থাকে।

জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বেতন-ভাতা খাতে। যার পরিমাণ ৩৭কোটি ৯১লক্ষ টাকা। পাশাপাশি গবেষণা খাতে পূর্ববর্তী অর্থবছর থেকে ৩০লক্ষ টাকা বাড়িয়ে মাত্র ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা করা হয়েছে। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই বাজেট নিতান্তই কম বলে মনে করছেন অনেকেই।

বাজেটের বিষয়ে কথা বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুবের সাথে।  একটি সরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ৬৩কোটি ১০লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? উত্তরে মাহবুব বলেন,  প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই বাজেট একেবারেই সামান্য।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ দিয়ে উপাচার্য বলেন, আমাদের থেকে তাদের বাজেট অনেক বেশি। কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটও বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েতো আরো বেশি।

কিন্তু আমাদের এত কম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ইচ্ছেমতো চাহিদা করলেই সরকার টাকা বরাদ্দ দিবেনা। টাকা বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার অনেককিছু বিবেচনা করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম, প্রশাসনিক কার্যক্রম সহ আরো অনেক কিছু বিবেচনা করা হয়। তবে সরকার আমাদের যা দিয়েছেন, সেটি দিয়েই চলতে হবে। ধীরে ধীরে হয়ত বাজেটের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

বাজেটে চাহিদার পরিমাণ বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো গাফিলতি আছে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাসাধ্য চেষ্টা করেও উন্নতি করতে পারেনা প্রযুক্তি খাত। তৈরি করতে পারেনা প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবনী। পরিবর্তন করতে পারেনা মান্ধাতার আমলের ব্যবস্থা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের স্মার্ট কার্ড(পরিচয় পত্র) দেওয়ার কথা বলে নেওয়া হয় ৪০০টাকা করে। বিপরীতে দেওয়া হয় ৩০ টাকার সাধারণ পরিচয় পত্র। অনেকের মাস্টার্স শেষ হয়ে গেলেও তারা পরিচয়পত্র পায়নি।

প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা বিড়ম্বনার শিকার হন। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারেও নেই কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া। রয়েছে পুরোনো প্লেটের উপর সারিবদ্ধ করে সাজানো কিছু বই।

এ বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. মোবারক হোসেন বলেন, আমরা যথাসাধ্য বাজেট বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করেছি। অবশেষে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ৯ কোটি টাকা বেড়েছে। এর মধ্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।

বিআরইউ