ইবিতে নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে সেমিনার ও আলোচনা সভা

ইবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ০৭:০১ পিএম
ইবিতে নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে সেমিনার ও আলোচনা সভা

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নজরুল জয়ন্তী-২০২৫ উপলক্ষে সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে বাংলা বিভাগের সহযোগিতায় সেমিনারটি আয়োজন করা হয়। এ সময় অতিথিদের মাঝে উত্তরীয় ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয় এবং জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মনজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।

মুখ্য আলোচক কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার বলেন, “হিন্দুদের রেনেসাঁ শুরু হয়েছিল হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, আর বাঙালি রেনেসাঁ শুরু হয় ১৮৯৯ সালে নজরুলের জন্মের মধ্য দিয়ে। বেঁচে থাকার জন্য যেমন আলো, বাতাস, খাদ্য ও পানি প্রয়োজন, ঠিক তেমনি চারটি বিষয় নজরুলের মধ্যে রয়েছে। দুধের সাথে সাদার যেমন সম্পর্ক, দেহের সাথে রুহের যেমন সম্পর্ক, নজরুলের সাথে বাংলাদেশের তেমনই সম্পর্ক। নজরুলকে বাদ দিলে আমাদের যুদ্ধ অর্থহীন হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও নারী অধিকার অর্থহীন হবে। জুলাই বিপ্লবে যারা রাস্তার গ্রাফিতি আঁকলেন, তারা সবাই নজরুলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের সব গ্রন্থ আমি পড়েছি, কিন্তু কোথাও মহানবী (সা.)-এর নাম নেই। তিনি বাংলাদেশে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেননি বরং শিক্ষিত হওয়া অবজ্ঞা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ যখন নোবেল পেয়েছিলেন, তখন নওগাঁতে তার নামে প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। রবীন্দ্রনাথ আমার আকাশ, নজরুল আমার মাটি। রবীন্দ্রনাথ না থাকলে বাংলা ভাষার মিহি গুণ বুঝতাম না, আর নজরুল না থাকলে বাংলা ভাষার ভেজা-স্যাঁতসেঁতা দিক বুঝতাম না। কলকাতা কেন্দ্রিক রাজাকারেরা বাংলার জন্য কিছু করেনি, তারা ইংরেজদের দালাল ছিল। নজরুল না থাকলে বাংলা ভাষার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অগ্নিগরির লাভা বুঝতাম না। ১৯২৯ সালের পর একমাত্র ইউনুস সরকার তাকে জাতীয় কবি হিসেবে গেজেট প্রকাশ করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ৯৮ ভাগ হিন্দু-মুসলমানের সমন্বয়, যা নজরুল ধারণ করতেন। জিয়াউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ চর্চার বিকল্প নেই নজরুল চর্চা। ভারতের বিষাক্ত দেশ ও ঘৃণার জন্ম হয়েছে। সেখানে একদিনে ৫০০ মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের দেশে নজরুল থাকায় ঘৃণার চাষ হয় না। সবচেয়ে বেশি দালালি করছে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, যারা নজরুলের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের মূল ক্রেডিট জিয়াউর রহমানের। তিনি বলেছিলেন, যারা হিন্দু তারা হিন্দু থাকুক, যারা পাহাড়ি তারা পাহাড়ি পরিচয় নিয়ে থাকবে। ফ্যাসিবাদের আইকন রবীন্দ্রনাথ, যারা তাঁর চর্চা করে তারা দেশদ্রোহী। রবীন্দ্রনাথের নামে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ চর্চা ফ্যাসিবাদকে কায়েম করেছে, আর মুজিব ছিলেন তার অস্ত্র। রবীন্দ্রনাথের নামে ৫১ হাজার ওয়েবসাইট, অথচ নজরুলের মাত্র ১০। সরকার উচিত নজরুলকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে কাজে লাগানো।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “মানুষ মানুষের জন্য, মানুষের মুক্তি, শৃঙ্খল থেকে মুক্তির পথ, বিদ্রোহী গান ও কবিতার রস সবই নজরুলের লেখায় ফুটে উঠেছে। শোষিত সমাজের মুক্তির জন্য তার পদধ্বনি響িত হয়েছে। সাম্যের কবিতার মাধ্যমে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সাম্যের সুর চিরকালীন কল্পনায় উজ্জীবিত করে গেছেন। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা, দরিদ্রদের কথা বলেছেন। তিনি আমাদের চেতনার ধ্বনি। আমার গানের সুরে বলি—আমার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনায় নজরুল। মানবতা ও বিবেকের চেতনা আমাদের চেতনা। নজরুল আমাদের মাঝে বারবার ফিরে আসে জন্ম জয়ন্তীতে।”

ইএইচ