‘ভেজালযুক্ত খাবার মানুষের শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর’

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৩, ০১:০৩ পিএম
‘ভেজালযুক্ত খাবার মানুষের শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় পুষ্টি সেবার (এনএনএস) উদ্যোগে নগরীর সিনেমা প্যালেস সংলগ্ন লয়েল রোডস্থ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক এক কর্মশালা 
রোববার (১১ জুন) বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়। ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. সুমন বড়–য়ার সভাপতিত্বে ও জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্টিত কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রিসোর্স পার্সন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় উপ-পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. ইফতেখার আহমেদ। 

মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় পুষ্টি সেবার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. মনিরুজ্জামান। 

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের এসপি সফিজুল ইসলাম, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল আলম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাধবী বড়–য়া, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. ওমর ফারুক, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক ডা. মো. শোয়েব, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ইনচার্জ) মো. ফখরুল আলম, জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শারমীন আক্তার, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারহান ইসলাম, জেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর এস.এম শওকত আলী (নোয়াখালী), মো. সালাউদ্দিন (রাঙ্গামাটি), মশিউর রহমান দেওয়ান (চট্টগ্রাম), মো. ইসরাইল হোসাইন (কুমিল্লা), মো. নুরুল করিম (ফেনী), নজরুল ইসলাম (চাঁদপুর) প্রমূখ। 

কর্মশালায় বক্তারা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক জ্ঞান অর্জন প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য সচেতনতাই হতে পারে মুক্তির পথ। যে খাদ্য দেহের জন্য ক্ষিতিকর নয় বরং দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয় পূরণ ও রোগ প্রতিরোধ করে তাই স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্য। ভেজালযুক্ত খাবার মানুষের শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত আগামী ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভেজাল খাবার রোধসহ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের উৎপাদিত খাদ্য যদি নিরাপদ হয় তাহলে দেশের অভাব মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করার সুযোগ রয়েছে। দেশের সকল মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনমানের উন্নয়ন জরুরী। নইলে মেধাবী ও বৃদ্ধিমত্তাসম্পন্ন নেতৃত্ব পাওয়া যাবে না। 

বক্তারা বলেন, আমাদের দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তবে খাদ্যে ভেজাল দিতে একটি অসাধু চক্র সক্রিয়। জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা না করে অধিক মুনাফার লোভে তারা খাদ্যদ্রব্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশাচ্ছে। ভেজাল খাবার খাদ্য সামগ্রীর প্রকৃতি ও গুণগত মান নষ্ট করে। খাদ্যপণ্যে ভেজালের কারণে দেশের আগামী প্রজন্ম অর্থাৎ আজকের শিশুদের শারীরিক ও মানসিক দক্ষতার বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

খাবারে কৃত্রিম রঙের ব্যবহার, সীসা দূষণ, ফল পাকাতে ও সংরক্ষণ করতে মারাত্বক ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার জাতিকে জীবনঘাতি রোগের দিকে ঠেলে দেবে। স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় এমন ত্রুটিপূর্ণ খাবার পরিহার করার পাশাপাশি এ ব্যাপারে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। 

বক্তারা আরও বলেন, নিজেদের দৈনন্দিন নেতিবাচক খাদ্যাভাসের কারণে আশংকাজনকভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে দেশের তরুণ থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষ। অথচ অর্গানিক রুটিন মাফিক জীবন যাপনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ সুস্থতা অর্জন সম্ভব। সুস্থ থাকতে হলে মানুষকে কি করতে হবে তা অসেকের জানা থাকা সত্তে¡ও অভ্যাসগত কারণে পালন করতে চায়না। 

তবে সময়ের পরিবর্তনে ভেজালকে পরিহার করে সুষম ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের লক্ষ্যে সকলকে অভ্যাস গড়ে তোলার আহবান জানান বক্তারা।   

বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্যবান জাতি গঠনে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের কোন বিকল্প নেই। শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। সর্বসাধারণের মাঝে শিক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টিতে একযোগে কাজ করতে হবে। 

যারা ব্যবসায়ী, খাদ্য উৎপাদক, যোগানদাতা ও আইন প্রয়োগকারী, দিন শেষে তারাও ভোক্তা। তাই ভোক্তা হিসাবে সচেতন হলেই তারা খাদ্যে ভেজাল মিশ্রন ও মানহীন খাবার বিক্রি করা অথবা অন্য ভোক্তার অধিকার খর্ব করতে পারেন না।       

এইচআর