ভারতের পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য পদ ফিরে পেয়েছেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও দলটির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা রাহুল গান্ধী। সোমবার (৭ আগস্ট) ভারতের সংসদ সচিবালয় বিরোধী কংগ্রেস এই নেতাকে লোকসভার সদস্য হিসাবে পুনর্বহাল করে।
এর আগে মানহানির জন্য রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া সাজা স্থগিত করেছিলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানহানির দায়ে ইতোপূর্বে ঘোষিত সাজা সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করার পর ভারতের পার্লামেন্ট সোমবার বিরোধী কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধীকে সদস্য হিসাবে পুনর্বহাল করেছে বলে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
রাহুল গান্ধীর বাবা, দাদী এবং প্রপিতামহ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ২০১৯ সালের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও একই নামের অন্যদের জন্য ‘অপমানজনক বলে বিবেচিত’ মন্তব্যের জন্য ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একজন আইনপ্রণেতার দায়েরকৃত মামলায় চলতি বছরের মার্চ মাসে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। আর এরপরই তার সংসদ সদস্য পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
রয়টার্স বলছে, আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর এবং সাজা পাওয়ার পর ৫৩ বছর বয়সী রাহুল গান্ধী তার সংসদীয় আসন হারান এবং দুই বছরের জন্য জেলে গেলেও পরে জামিনে মুক্তি পান। নিম্ন আদালতে নিজের ওই সাজা নিয়ে তিনি শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং সুপ্রিম কোর্ট গত সপ্তাহে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা রায় স্থগিত করে।
একইসঙ্গে রাহুল গান্ধীকে সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সংসদে ফিরে যেতে এবং আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেয় শীর্ষ আদালত। এছাড়া রাহুল গান্ধী তার সাজা বাতিল করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তার সেই চ্যালেঞ্জ এখনও নিম্ন আদালতে শুনানি হয়নি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, সংসদ সদস্য হিসাবে পুনর্বহাল করা হয়েছে রাহুল গান্ধীকে। সোমবার সকালেই লোকসভার সচিবালয়ের পক্ষ থেকে রাহুল গান্ধীর সদস্য পদ ফেরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে করে আজ থেকেই সংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন রাহুল।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘মোদি’ পদবি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে মানহানির মামলায় জড়িয়ে পড়েন রাহুল গান্ধী। পরে তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মানহানি মামলা দায়ের করেন গুজরাটের বিজেপি সংসদ সদস্য পূর্ণেশ মোদি।
ওই মামলায় চলতি বছরের মার্চ মাসে সুরাট দায়রা আদালত রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং দুই বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেয়। সুরাট আদালতের রায়ের পরদিনই জনপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদ হারান রাহুল গান্ধী। পরে ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে প্রথমে গুজরাট হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন গান্ধী পরিবারের এই সদস্য।
তবে গত ৪ আগস্ট সুরাট আদালতের ওই সাজার রায়ের ওপরে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপরই সংসদ সদস্য পদ ফিরে পাওয়ার পথ খুলে যায় রাহুল গান্ধীর। সেই দিনই লোকসভার স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে রাহুলের সংসদ সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সোমবার সংসদের অধিবেশন শুরু হতেই লোকসভার সচিবালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাহুল গান্ধীর সদস্য পদ ফেরানোর কথা জানানো হয়। মূলত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সংসদ সদস্য পদ ফিরল রাহুলের।
এতে করে আজ থেকেই লোকসভার অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন রাহুল গান্ধী। এমনকি মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের আলোচনায় মঙ্গলবার রাহুল অংশ নেবেন বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
এইচআর