ফের উত্তপ্ত মণিপুর: ছড়াল সহিংসতা, কারফিউ-ইন্টারনেট বন্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক   প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৫, ০১:৪৮ পিএম
ফের উত্তপ্ত মণিপুর: ছড়াল সহিংসতা, কারফিউ-ইন্টারনেট বন্ধ

ভারতের মণিপুরে ফের শুরু হয়েছে অস্থিরতা। মেইতেই গোষ্ঠীর সংগঠন ‘আরামবাই তেংগল’-এর শীর্ষ নেতা কানন সিংহকে সিবিআই গ্রেপ্তার করার পর রাজ্যজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রোববার থেকে ইম্ফল ইস্ট, ইম্ফল ওয়েস্ট, কাকচিং, থৌবাল ও বিষ্ণুপুর জেলায় মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি জেলায় পুনরায় কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন।

সিবিআই জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জাতিগত সংঘর্ষে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরামবাই তেংগল নেতা এবং মণিপুর পুলিশের সাবেক হেড কনস্টেবল কানন সিংহকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সঙ্গে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করে গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়। ইম্ফল ইস্ট জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, ইয়াইরিপোক এলাকায় একটি পুলিশ পোস্টে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিক্ষোভকারীরা সড়কে ব্যারিকেড গড়ে তোলে, টায়ার জ্বালিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অগ্রগতি ঠেকানোর চেষ্টা করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। পিটিআই জানিয়েছে, এ ঘটনায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।

বিক্ষোভের অংশ হিসেবে আরামবাই তেংগল সংগঠন দশ দিনের রাজ্যব্যাপী বন্ধ (হরতাল) ডেকেছে। সংগঠনটির দাবি, তাদের সদস্যদের বিনা কারণে টার্গেট করা হচ্ছে।

পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় কুমার ভল্লা জরুরি বৈঠকে বসেন রাজ্যের ২৫ জন বিধায়ক, রাজ্যসভার সদস্য লেইসেম্বা সানাজাওবা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

বৈঠকে রাজ্যপাল বলেন, “বন্যা পরিস্থিতিতে আরামবাই তেংগল মানবিক সহায়তা দিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে না।”

তবে বিরোধী কংগ্রেস বিধায়ক ওক্ৰম সূর্যকুমার বলেন, “এভাবে হঠাৎ কাউকে গ্রেপ্তার করলে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়। স্বচ্ছ ব্যাখ্যা দিতে হবে। এখন সবচেয়ে জরুরি, রাজ্যে শান্তি ফেরানো।”

এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সাসপেনশন অব অপারেশন (এসওও) চুক্তিভুক্ত কুকি-জো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এক কুকি প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি আশা করছি। আমাদের লক্ষ্য স্থায়ী শান্তি।”

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মে মাস থেকে মেইতেই ও কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং কয়েক হাজার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

চলমান সংকটের মধ্যে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং পদত্যাগ করেন। এরপর থেকেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি রয়েছে।

এদিকে, পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনও মণিপুর সফর করেননি, যা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র সমালোচনা করছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

ইএইচ