ইরান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে সহযোগিতা করতে রাজি পাকিস্তান

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম
ইরান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে সহযোগিতা করতে রাজি পাকিস্তান

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত অব্যাহত থাকায় তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের পাকিস্তান হয়ে দেশে ফেরাতে চায় সরকার। বাংলাদেশের প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি আছে পাকিস্তানের। দেশটি ইরান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে সহযোগিতা করতে চায়। তবে এখনো বাংলাদেশিদের ফেরার প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি ইসলামাবাদ।

তেহরান-ইসলামাবাদের নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানকার পাকিস্তান দূতাবাসে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে। সেই পত্রে তেহরান থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশিদের দেশে ফেরানোসহ প্রাথমিকভাবে ৯০ বাংলাদেশির তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশিদের ফেরানো নিয়ে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছেন ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসাইন খান। বুধবার (১৮ জুন) পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

ইসলামাবাদের একটি নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্র জানায়, তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরানোর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে পাকিস্তান। এজন্য ইরান থেকে ফিরতে চাওয়া বাংলাদেশিদের অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। তবে চলমান পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত থাকায় এটি সম্ভব নয় বলে পাকিস্তানকে জানানো হয়েছে।

তেহরানের একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ায় গুরুত্ব দিচ্ছে দূতাবাস। তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানকার পাকিস্তান দূতাবাসে প্রাথমিকভাবে ৯০ বাংলাদেশির একটি তালিকা হস্তান্তর করেছে। পাশাপাশি তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের সীমান্ত অতিক্রম করাতে ইরান সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় তেহরানে থাকা বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অন্তর্বর্তী সরকার। ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির মধ্যে ১০০ জনের মতো দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের প্রায় অর্ধেকের মতো তেহরান থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন। ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, অন্য কূটনীতিকসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে ৪০ জন নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের স্থলপথে ইরান-পাকিস্তান সীমান্তে নেওয়া হতে পারে। এরপর পাকিস্তান থেকে তাদের করাচি-দুবাই হয়ে ঢাকায় ফেরত আনার পরিকল্পনা করছে সরকার।

ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র জানায়, তেহরান থেকে পাকিস্তান সীমান্তে বাংলাদেশিদের প্রবেশ করতে পাকিস্তান সরকার ভিসার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে বলেছে। কিন্তু ইন্টারনেট সীমিত থাকায় অনলাইনে ভিসার আবেদন কঠিন হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থায় বা বিশেষ কোনো বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে। নীতিগতভাবে পাকিস্তান বাংলাদেশিদের ফেরাতে রাজি হয়েছে। ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে দেশটি। ইরান থেকে পাকিস্তানে প্রবেশের পর বাংলাদেশিরা দেশটিতে বেশি সময় অবস্থান করবেন না বলে পাকিস্তান সরকারকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।

ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। তারা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি। ইরানে ইন্টারনেট সীমিত থাকায় আমাদের দিক থেকে অনলাইনে ভিসার আবেদন না করে সরাসরি পাসপোর্ট সাবমিট বা অন-অ্যারাইভাল বা বিশেষ বিবেচনায় পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যাদের কাগজপত্র আছে তারা আসতে পারবে, সমস্যা হবে না। বৈধ ভিসাধারী এবং কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের আগে আনা হবে। তবে অবৈধদের নিয়ে ঝামেলা হতে পারে। নীতিগত সিদ্ধান্ত– পাকিস্তান সহযোগিতা করবে, কাজ চলছে।

চলমান পরিস্থিতিতে ইরানের আকাশপথ বন্ধ রয়েছে। ইরান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে হলে স্থলপথে ফেরাতে হবে। এক্ষেত্রে পাকিস্তান ও তুরস্ক হয়ে বাংলাদেশিদের ফেরানোর সুযোগ রয়েছে। এটি করতে গেলে প্রথমে ইরান সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তান বা তুরস্কে যেতে হবে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় তুরস্ক সহযোগিতার হাত বাড়বে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

তবে বাংলাদেশিদের পাকিস্তান হয়ে ফেরানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে স্থলপথে পাকিস্তানে যেতে প্রথমে ইরান সীমান্ত অতিক্রম করতে হবে। এরপর বেলুচিস্তান সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করতে হবে। পাকিস্তান থেকে ঢাকায় সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় করাচি-দুবাই হয়ে বাংলাদেশিদের ঢাকায় ফেরাতে চায় সরকার।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাতের মধ্যে গত রোববার (১৫ জুন) নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে তুরবত, পাঞ্জগুর ও গোয়াদার জেলায় ইরানের সঙ্গে থাকা সব সীমান্ত ও ক্রসিং পয়েন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দুজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আটজন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন। তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এ ছাড়া ২৮ জন বাংলাদেশির গত ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েছেন। সবমিলিয়ে তেহরানে ৪০০ বাংলাদেশি রয়েছেন।

ইরানের অন্যান্য জায়গায় প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সে দেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তারা স্থায়ী হয়েছেন। এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন সেক্টরে চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। ২০০-এর মতো শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এ ছাড়া মানবপাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সবসময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়।

বিআরইউ