যুক্তরাজ্যে গোপনে সম্পদ বিক্রি করছেন হাসিনার ঘনিষ্ঠরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ১০:২১ পিএম
যুক্তরাজ্যে গোপনে সম্পদ বিক্রি করছেন হাসিনার ঘনিষ্ঠরা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্যে তাদের মালিকানাধীন সম্পত্তি লেনদেন করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলো যখন ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করছে, ঠিক সে সময়েই যুক্তরাজ্যে তাদের সম্পদ বিক্রি, বন্ধক বা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

ব্রিটেনের জমি নিবন্ধন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পদ লেনদেন সংক্রান্ত অন্তত ২০টি আবেদন জমা পড়েছে।

এই তথ্য উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর এক যৌথ অনুসন্ধানে। শনিবার (১৯ জুলাই) গার্ডিয়ান এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের প্রায় এক বছর পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক কোন্দল ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সংগ্রাম করছে। এমন প্রেক্ষাপটে লন্ডনের নাইটসব্রিজ বা সারের অভিজাত এলাকায় অবস্থিত বিলাসবহুল প্রাসাদতুল্য বাড়িগুলো হয়তো দূরের বিষয় বলে মনে হলেও, বাস্তবতা ভিন্ন।

ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং অন্যান্য সংস্থা আগের সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিদেশে অর্থ পাচার ও লুটপাটের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।

গত মে মাসে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA), যেটি ব্রিটেনের ‘এফবিআই’ নামে পরিচিত, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজার লন্ডনের প্রায় ১,৪৬৯ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করে। এর আগেই গার্ডিয়ান ওই পরিবারের যুক্তরাজ্যে বিস্তৃত সম্পদ পোর্টফোলিও প্রকাশ করেছিল।

এর তিন সপ্তাহ পর সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ড সমমূল্যের সম্পদ জব্দ করে এনসিএ। হাসিনা শাসনামলে বিপুল বিত্ত-বৈভব গড়ে তোলেন তিনি। যুক্তরাজ্যে তার নামে ৩০০টিরও বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ও বিলাসবহুল টাউনহাউস রয়েছে।

যৌথ অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ঢাকায় তদন্তাধীন শেখ হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর কিংবা বন্ধক রেখেছেন। এই ঘটনায় যুক্তরাজ্যের আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে গার্ডিয়ান।

বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা লন্ডনের সম্পত্তিগুলোকে দুর্নীতিবিরোধী একটি বহুল প্রতীক্ষিত অভিযানের অংশ হিসেবে দেখছেন এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে সম্পদ জব্দ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

জমি নিবন্ধন সংস্থার নথি বলছে, গত এক বছরে ঢাকায় তদন্তাধীন ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততায় কমপক্ষে ২০টি সম্পদের লেনদেন সংক্রান্ত আবেদন জমা পড়ে, যার মধ্যে বিক্রি, মালিকানা পরিবর্তন কিংবা বন্ধক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অবৈধ সম্পদের সঙ্গে আরও দুই ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পেয়েছে দুদক। তারা হলেন তার ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং এক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, যার নাম প্রকাশ করেনি গার্ডিয়ান।

নথি অনুযায়ী, আনিসুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন চারটি সম্পত্তির বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে সেন্ট্রাল লন্ডনের রিজেন্টস পার্ক সংলগ্ন ১৬৩ কোটি টাকার এক জর্জিয়ান টাউনহাউস গত জুলাই মাসে বিক্রি হয়ে যায়। পরবর্তীতে আরও তিনটি সম্পত্তির লেনদেন আবেদন জমা পড়ে।

আনিসুজ্জামানের আইনজীবীরা গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, তার কোনো সম্পদ জব্দ করার আইনগত ভিত্তি নেই, কারণ রিজেন্টস পার্কের সম্পত্তির বিক্রি ২০২৩ সালেই চূড়ান্ত হয়।

এদিকে বেক্সিমকো কর্ণধার ও কারাবন্দী সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমান-এর মালিকানাধীন সম্পদ সম্পর্কেও জমি নিবন্ধন দপ্তরে তিনটি নতুন লেনদেন আবেদন জমা পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক উপ-গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমরা জানি, সম্পদ বিক্রির চেষ্টা চলছে। যুক্তরাজ্য সরকারকে আমরা অনুরোধ করছি, আরও সম্পদ জব্দের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে।” তিনি বলেন, “লেনদেন বন্ধ করা গেলে আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পদ ফেরত আনার বিষয়ে আশাবাদী হতে পারি।”

দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন গত মাসে বলেন, “বিপ্লব-পরবর্তী সময়ের সম্পদ লেনদেন বন্ধে আমরা এনসিএ-কে আরও জোরালো ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছি।”