প্রাথমিকের শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বন্ধ: আপিল বিভাগ

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২২, ১১:৩৩ এএম
প্রাথমিকের শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বন্ধ: আপিল বিভাগ

দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ কার্যক্রমের উপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। সেইসঙ্গে জাতীয়করণের তারিখ থেকে হিসাব না করে ৫০ শতাংশ সার্ভিস কাউন্ট করে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিতে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত করেছেন আদালত।

রোববার (২০ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান, মোমতাজ উদ্দিন ফকির, মো. মোতাহার হোসেন সাজু, সাঈদ আহমেদ রাজা। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, নিগার সুলতানা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে রিটকারীর আইনজীবী সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া।

এরআগে এ সক্রান্ত দেয়া হাইকোর্টের রায় ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।

জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, সরকারিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে পূর্বের চাকরিকাল গণনা করার বিধিগত সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ্ মিয়া জানান, ‘অধিগ্রহণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকরির শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালার বিধি ২(গ) অনুসারে সরকারিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আত্তীকরণের আগের চাকরিকালের ৫০ শতাংশ গণনা করার বিধান থাকলেও সম্বলিত জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরির সময় ওই বিধি মানা হয়নি।

তা না মেনেই জ্যেষ্ঠতার তালিকা করা হয়েছে। বিধিমালার ৯(১) এর শেষ অংশ বলা হয়েছে, পূর্বে নিয়োগ বিধির অধীন শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বশেষ ব্যক্তির নিচে সহকারী শিক্ষকের অবস্থান নির্ধারিত হবে” যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি আরও দাবি করেন, অধিগ্রহণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকরির শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালার ৯ (১) এর শেষ অংশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। পরবর্তিতে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ‘আগের নিয়োগ বিধির অধীন শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বশেষ ব্যক্তির নিচে সহকারী শিক্ষকের অবস্থান নির্ধারিত হইবে” অবৈধ ঘোষণা করে গত বছরের ১১ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। আপিল শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট আপিলটি ফের শুনানি করতে বলে। যা আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমান আছে।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে সারাদেশের সরকারিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হাইকোর্টে একাধিক রিট পিটিশন দায়ের করেন। যা শুনানির জন্য অপেক্ষমান আছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ উপেক্ষা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামতের জন্য চিঠি পাঠান।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে  শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের চাকরিকাল গণনা করার বিধিগত সুযোগ নেই, যা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ অবমাননার শামিল। তাই শিক্ষকদের পক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২৩ ফেব্রুয়ারির চিঠি বাতিল বা প্রত্যাহার করার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

এরআগে ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ি ২৬,১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। সে প্রেক্ষিতে পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নব জাতীকরণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের সম্মিলত জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রণয়নকালে নবজাতীয়করণকৃত শিক্ষকগণকে অধীগ্রহণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিধিমালা ২০১৩ এর ৯ বিধি এর উপবিধি ১ অনুযায়ি ২০১৩ সালের পূর্বে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের নিচে অবস্থান দেখিয়ে জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রণয়ন করা হয় ।

টিএইচ