কবি সুকান্তের ৭৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৩, ০১:৫৫ পিএম
কবি সুকান্তের ৭৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী

‘প্রয়োজন নেই, কবিতা স্নিদ্ধতা/কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,/ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়;/পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ কবিতার এই ক‍‍`টি চরণ বারবারই আমাদের সামনে উপমা হয়ে দাঁড়ায়। আর বারবারই সামনে এসে দাড়ান কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য।  বিপ্লবী এই কবির ৭৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

১৯৪৭ সালের ১৩ মে  কলকাতার যাদবপুরে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতার কালীঘাটে মামা বাড়িতে। বাবা নিবারণ ভট্টাচার্য। মা সুনীতি দেবী। কবির পিতৃপুরুষের নিবাস গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের উনশিয়া গ্রাম। বাবা কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে বইয়ের ব্যবসা করতেন। ব্যবসার সুবাদে কবির পরিবারকে কলকাতায়ই থাকতে হতো।

উনিশ শতকের গোড়াতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এ সময় বিপ্লববাদী ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভেতর থেকে কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। ক্ষণজন্মা এ কবি কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতা‍‍`র (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন। মার্ক্সবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন।

তার রচনাবলীর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো : ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি।

দীর্ঘদিন কবির পরিবার কলকাতায় অবস্থান করার কারণে কোটালীপাড়ার তার পূর্ব পুরুষের ভিটাটি বেদখল হয়ে যায়। দীর্ঘকাল ধরে বেদখল থাকার পরে ২০০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কবিদের বাড়ি দখলমুক্ত হয়। এর পর কবির পৈত্রিক ভিটাটি দীর্ঘদিন শূন্য অবস্থায় পড়েছিল।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে জেলা পরিষদ কবির পৈত্রিক ভিটায় একটি অডিটরিয়াম ও লাইব্রেরি স্থাপন করেছেন। এখানে কবির স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য প্রতি বছর মার্চ মাসে একটি মেলার আয়োজন করা হয়।

সুকান্ত ভট্টাচার্যকে অনেক সময় ‘কিশোর কবি’ বলা হয়ে থাকে। এটা ঠিক তিনি মাত্র একুশ বছর পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন। তবে তাঁর জীবন দর্শন ও কাব্যের বিষয়বক্তব্য মোটেই ‘কিশোর মানসিকতা প্রসূত’ ছিল না। পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিকদের মতোই সুকান্ত ভট্টাচার্য যুগপৎ কবি ও রাজনৈতিক কর্মী।

এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ভাষায়, সুকান্ত বিস্মরণের কবি নন। গভীর দার্শনিকতা, পরিচ্ছন্ন ইতিহাসজ্ঞান এবং প্রবল দেশপ্রেম তাঁকে দিয়ে রচনা করিয়ে নিয়েছে বিপ্লবী অনুভবের শিল্পিত কবিতাগুচ্ছ। তাই তাঁর বিপ্লবী ও কবিসত্তাকে পৃথক করে দেখার কোনো অবকাশও নেই।

আরএস