এক সঙ্গে দুই ঘূর্ণিঝড়, একটির ভয়ংকর রূপ ধারণের সম্ভাবনা

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: মে ৯, ২০২২, ০২:৩৩ পিএম
এক সঙ্গে দুই ঘূর্ণিঝড়, একটির ভয়ংকর রূপ ধারণের সম্ভাবনা

দক্ষিণ আন্দামান সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ এখন বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এদিকে ভারত মহাসাগরে আরও একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটিও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর। আর নতুন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ‘আসানি’র গতি পাল্টে নিতে পারে ভয়ংকর রূপ।

ভারতের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, টুইন সাইক্লোন বা যমজ ঘূর্ণিঝড় অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে কোনটি বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে বা কোনটির প্রভাব কেমন হবে, সেটাই এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যমজ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসানির গতি আরও বেশি হবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ, সেটি নির্ভর করছে অন্য নিম্নচাপটির শক্তিশালী হওয়ার ওপর।

জানা যায়, নিরক্ষরেখার উত্তরে ঘূর্ণিঝড় আসানি। আর নিরক্ষরেখার দক্ষিণে দ্বিতীয়টি এখন নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি দ্রুত আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, একদিকে যেমন আসানি জলীয় বাষ্প টানবে আন্দামান সাগর থেকে, অন্যদিকে নতুন নিম্নচাপটি জলীয় বাষ্প টানবে ভারত মহাসাগর থেকে। দুটির মধ্যে বিস্তর টানাটানি হবে। ফলে একদিকে যেমন বায়ুপ্রবাহ পাক খাবে ঘড়ির কাঁটার দিকে, তেমনি অন্যদিকে তা ঘুরবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতেও। যে বেশি বাতাস টানবে, তারই শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের উপপরিচালক সানাউল হক মন্ডল জানান, আপাতত তারা প্রবল ঘূর্ণিঝড় অশনি পর্যবেক্ষণ করছেন। ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এবং উপকূলের দিকে এগিয়ে এলে তখন তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। আর এত দূরের ঝড়ের প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার আশঙ্কাও প্রায় নেই।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসানি’র প্রভাবে সোমবার (৯ মে) সকাল থেকে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরণের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসানি’র অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে আজ সকাল ৯ টা পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরণের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর একটি বাড়তি অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু স্থানে এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তী তিন দিনে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।

সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় সীতাকুন্ডে সর্বোচ্চ ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় ২৫, কুতুবদিয়ায় ১৯ ও কক্সবাজারে ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। 

সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাংগাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চল সমূহের উপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব অথবা পূর্ব দিক থেকে ঘন্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজস্রহ বৃষ্টি হতে পারে। এ সব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, খুলনা ও যশোর জেলাসহ সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে।

এ ছাড়া সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। 

আমারসংবাদ/জেআই