দেশের অর্থনীতিতে আট কোটি মানুষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে 

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২২, ০৭:৪৭ পিএম
দেশের অর্থনীতিতে আট কোটি মানুষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে 

জাতিসংঘের উপাত্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ২৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সি মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (কম বেশি আট কোটি) যারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। 

দেশে আরো আট কোটি (অনুর্ধ্ব-২৫ বছর বয়সি) মানুষ নিকট ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখবে। এটি যে কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য দারুণ সহায়ক অবস্থা এবং এটা যথাযথভাবে ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা করা গেলে দেশের উন্নয়ন দারুণভাবে ত্বরান্বিত হবে। আর সেজন্য সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জাতি গঠনের কোন বিকল্প নেই বলে অভিমত করেছেন বিশেষজ্ঞদের।

বুধবার (২০ জুলাই) রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বেসরকারি এনজিও লাইট হাউসের আয়োজনে ও ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় এসব অভিমত গণ্যমাধ্যমে তুলে ধরা হয়। 

লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের সদস্য সচিব ফারুক আহমেদ তালুকদার, পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রগ্রাম ম্যানেজার ডা. মনজুর হোসাইনসহ লাইট হাউজের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়া সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

সভায় জানানো হয়, আগামী ১৫ নভেম্বর, ২০২২ এ বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটির মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে। বিশ্বের এই বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে অনেক ধরণের আলোচনা ও উদ্যোগের মধ্যে গত ১১ জুলাই বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়েছে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস-২০২২। 

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল কর্তৃক বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস-২০২২ এর নির্ধারিত প্রতিপাদ্য ‘৮০০ কোটির পৃথিবী: সকলের সুযোগ, পছন্দ ও অধিকার নিশ্চিত করে প্রাণবন্ত ভবিষ্যৎ গড়ি’। তবে দেশে বিশ্বজনসংখ্যা দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে ২১ জুলাই পালন করা হবে। 

বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করার সঙ্গে সঙ্গে সবাই যদি নিজের ও পরিবারের জন্য সঠিক তথ্য জেনে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং আকাঙ্খিত গুণগতমানসম্পন্ন ও সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহতে পাওয়া যায় তবেই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জাতি, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে দেশে প্রতি মিনিটে চারজন শিশু জন্মগ্রহন করছেন। এ হিসেবে খুব  দ্রুত দেশের জনসংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি যাই হোক না কেন প্রতিটি দেশের উচিত এখনই দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

সংঘাত-সংঘর্ষ, মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নততর সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির আকাঙ্খাজনিতকারণে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃ দেশীয় অভিবাসন জনসংখ্যা কাঠামো বিন্যাসে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। সমাজের সকল ক্ষেত্রে এসকল পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য রয়েছে। 

এইজন্য তথ্যউপাত্ত ও প্রমাণের উপর ভিত্তি করে পরিবেশ ও জন-বান্ধব নীতি নির্ধারণ প্রয়োজন যা সকল মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকারসহ সবধরণের অধিকার ভোগ ও চর্চা করার পরিপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।

সভায় আরো জানানো হয়, দেশ যেহেতু সকলের, কাজেই দেশের উন্নতিকল্পে দেশের সব মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। প্রয়োজন সঠিক তথ্য জানা ও মানা এবং যথাযথ সেবা গ্রহণের  মাধ্যমে নিজেকে সুস্থ রাখা। 

আর সে লক্ষ্যেই কাজ করছে ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প। আমেরিকার জনগনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণকে দেওয়া সহায়তা নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল এবং সহযোগী সংস্থাসমূহ। 

এ প্রসঙ্গে পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল এর কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, মো. মাহবুব-উল-আলম বলেন, দেশের যেকোনো উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য জনকল্যাণ। 

আর জনকল্যাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সকলের জন্য গুণগত প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা সেবা সুনিশ্চিত করা। জনসংখ্যা কর্মসূচির অনুষঙ্গ হিসেবে দেশের দেশের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে দেশের সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প।  

এর আগে আরবান এরিয়ার স্বাস্থ্য কর্মী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ভবনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রজেক্ট দ্বিতীয় পর্যায় এর উদ্যোগে ও বেসরকারি এনজিও লাইট হাউজের সহযোগীতায় দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়। 

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব এ এফ এম আলাউদ্দিন খান। তিনি বলেন, ছয়টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হল সাস্থ্য সেবা। তাই সবার জন্যে প্রাথমিক সাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে এসজিডি লক্ষ পূরণ করে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জনগনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যেকোনো উদ্যোগে সহযোগিতা করতে সরকার প্রস্তুত রয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জনস্বাস্থ্য নিয়ে ২০১৭ থেকে ২০৩০ সালের যে কৌশল নির্ধারণ করেছে, সেটাও বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন উপ প্রকল্প পরিচালক ও উপ সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মনজুর হোসাইনসহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।


আমারসংবাদ/টিএইচ