বিশ্ব মশা দিবস আজ

দেশে ১২৩ প্রজাতির মশা শনাক্ত, ঢাকায় ১৪

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২২, ১২:১৮ পিএম
দেশে ১২৩ প্রজাতির মশা শনাক্ত, ঢাকায় ১৪

আজ বিশ্ব ‍‍`মশা দিবস‍‍`। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় ৪ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ মারা যায়। জনসাধারণকে সতর্ক করতে প্রতি বছর ২০ আগস্ট দিবসটি পালিত হয়। ২০ আগস্ট ‍‍`মশা দিবস‍‍` পালন করা হয় মূলত চিকিৎসক রোনাল্ড রসের আবিষ্কারকে সম্মান জানানোর জন্য।

১৮৯৭ সালের ২০শে আগস্ট চিকিৎসক রোনাল্ড রস অ্যানোফিলিস মশা বাহিত ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি এই আবিষ্কারের জন্য ‍‍`নোবেল‍‍` পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।

১৯৩০-এর দশক থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন দিবসটি প্রথম পালন করা শুরু করে।

গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশা শনাক্ত করা হয়েছে তারমধ্যে বর্তমান ঢাকাতে আমরা পাই ১৪ প্রজাতির। 

উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া থাকার কারণে বাংলাদেশ মশা ও মশাবাহিত রোগ বিস্তারের জন্য উত্তম জায়গা। বাংলাদেশ মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীসহ দেশজুড়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বিজ্ঞানভিত্তিক করতে হবে। তবেই মিলবে সাফল্য। তবে রাজধানীতে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সেভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। 

শীত মৌসুমে নর্দমা, জলাশয় পরিষ্কার রাখা, একইভাবে ডোবা, নালাসহ শহরে পানি যাতে না জমে—বর্ষা শুরুর আগে সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি ছিল। তবেই ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হতো। এ কাজগুলো করতে হলে বছরজুড়ে তৎপরতা চালাতে হবে।

রাজধানীর দুই সিটিতে প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট ও কাভার্ড ড্রেন রয়েছে। দুই সিটি সেখানে মশার ওষুধ ছিটাতে পারে না। পাশাপাশি প্লাস্টিকের দ্রব্যসামগ্রী, পলিথিন, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আবর্জনায় ড্রেনগুলো ভরাট থাকে। 

যে কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হয় না। জমে থাকা বদ্ধ পানিতে কিউলেক্স বংশবিস্তার করে। আবার দুই ভবনের মাঝের স্থানও হয়ে পড়ে ভাগাড়। এসব স্থানে মশার প্রজনন ধ্বংস করতে কর্তৃপক্ষ উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান  বলেন, ‘মশার উপদ্রব কমাতে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, ওষুধ ছিটানো এবং জনগণের দায়বদ্ধতা ও সচেতনতা নিশ্চিত করতে এসব কাজের সমন্বয় দরকার। 

সার্বিক পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা হিসেবে সিটি করপোরেশনকে নগরের খাল, নালা, সব ধরনের জলাশয়, রাস্তাঘাট, পার্ক-উদ্যান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধে ওষুধ ছিটানোর কাজ পরিকল্পিতভাবে করতে হবে। একই সঙ্গে নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। ’

মশা নিয়ন্ত্রণে উত্তর সিটির বাজেট কমেছে, বেড়েছে দক্ষিণে : গত অর্থবছরে মশা নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ ছিল ১১১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে উত্তর সিটির বরাদ্দ ৮৫ কোটি টাকা এবং দক্ষিণ সিটির ২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। 

আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে উত্তর সিটির মশা নিয়ন্ত্রণে বাজেট কমলেও দক্ষিণ সিটির বাজেট বেড়েছে। সংশোধিত বাজেটে উত্তর সিটির বাজেট ধরা হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা আর দক্ষিণ সিটির জন্য ৩০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

বাজেট কমায় মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে কি না জানতে চাইলে উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। গত বছর যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল এবার তার চেয়ে কম প্রয়োজন বলেই বাজেট কম। এবার মশার প্রকোপ কম। ’

দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে দক্ষিণে মশা নিয়ন্ত্রণে কতটা অগ্রগতি হয়েছে। 

এ বছর এডিস মশার প্রকোপ থেকেও নগরবাসীকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আর কয়েক সপ্তাহ পর এডিস তথা ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের আর ভয় থাকবে না। ’


আমারসংবাদ/টিএইচ