পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগে লিগ্যাল নোটিশ সেই আইনজীবীকে হত্যার হুমকি

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২২, ০৭:৫৫ পিএম
পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগে লিগ্যাল নোটিশ সেই আইনজীবীকে হত্যার হুমকি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে পদত্যাগে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইরশাদ হোসেন রাশেদকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। দেশি-বিদেশি তিনটি ফোন নম্বর থেকে নথি প্রদানের দিন থেকেই হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন আইনজীবি রাশেদ। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন তিনি।

আইনজীবী রাশেদ বলেন, হুমকিদাতারা দ্রুত সমস্যার সমাধান করার জন্য বলছে। অন্যথায় গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে পররাষ্ট মন্ত্রী বলেছেন, ভারতে গিয়ে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ‘যা যা করা দরকার’ তা-ই করার অনুরোধ করেছেন তিনি। আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য নানা মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য কেবল দুই দেশের কূটনীতিকদের জন্য বিব্রতকরই নয়, এটা দেশের জন্য মর্যাদাহানিকরও।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যে দেশের রাজনীতিতেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকেও কড়া প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকে বলেছেন, এটা দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন করেছে। ‘বিতর্কিত’ এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে রোববার ডাক ও রেজিস্ট্রার যোগে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ইরশাদ হোসেন রাশেদ। অন্যথায় আইনি প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। নোটিশে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আপনি ভারত সরকারকে যে অনুরোধ করেছেন, এটা আপনি করতে পারেন না। কারণ, সংবিধানে বলা হয়েছে, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। আপনি সংবিধানবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। আপনি মন্ত্রী পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

নোটিশ প্রেরণের পর থেকেই হত্যার হুমকি পাওয়া আইনজীবি রাশেদ আমার সংবাদকে বলেন, নথি দেয়ার দিন সন্ধ্যার পর থেকেই অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দেশি-বিদেশি ফোন নম্বর থেকে ফোন করে ক্রমাগত হুমকি প্রদান করে আসছে। তিনটি নম্বর থেকে ফোনগুলো আসছে। সমস্যার দ্রুত সমাধান করার জন্য বলছে তারা। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা আইনজীবি রাশেদ গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। যার নম্বরÑ ১৬১৬।

জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২১ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগ করার বিষয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করি। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফোন নম্বর থেকে আমাকে ফোন করে গালিগালাজ, ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। সবশেষ গতকাল সকাল সোয়া দশটার দিকে আমি আমার কোর্ট চেম্বারের (নংÑ ১০০৪৮), ১০ম তলায় সোহরাওয়ার্দী ভবনে বিজ্ঞ আদালতের মামলার বিষয়ে কাজ করাকালীন ০১৫৩৭৬৭২৫৩৫ নম্বর থেকে ফোন করে বলে- ‘সমস্যার সমাধান করবি কীনা? আমি কিন্তু ডাইরেক্ট গুলি করে মাইরা ফালাই’।

পরিচয় জানতে চাইলে ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি জানায়, ‘আমি গুলি করে মাইরা ফালাই, এটাই আমার পরিচয়’। তারপর আমি ফোন কল কেটে দেই। এরপরপরই আবার ০১৫৭৬৪৮৮৭৬৩ নম্বর থেকেও ফোন আসলে আর রিসিভ না করে কেটে দেই। অতঃপর দশটা ১৯ মিনিটের দিকে ফের ০১৫৭৬৫৭০৬৯৮ থেকে ফোন আসলে রিসিভ করি। প্রথম কলের সেই ব্যক্তিই আবার আমাকে কোর্টের সামনে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করলে আমি কল কেটে দেই। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নোটিশ প্রদানের পর থেকেই অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে অনুসরণও করছেন। যে কারণে তিনি ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।

জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে আমার সংবাদকে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ইরশাদ হোসেন রাশেদ একটি জিডি করেছেন। সেখানে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ জিডি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমি এখনো বাহিরে, ডিউটিতে আছি। জিডির কপি এখনো হাতে পাইনি, পেলে বলতে পারবো কে কাকে হুমকি দিয়েছে। নম্বরগুলোই বা কাদের’। 

গত ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরের জে এম সেন হলে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশেরই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। এটি সম্ভব যদি শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন দেয় ভারত। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’ মন্ত্রীর এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দলের বা সরকারের নয়।

ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতে অনুরোধ করতে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য প্রত্যাহার না করে জানান, তার বক্তব্য ভিন্নভাবে গণমাধ্যমে এসেছে। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, তোমাদের সরকারের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কারণে আমাদের এখানে সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বিদেশী বিনিয়োগ আসছে। আমি দিল্লিতে মিটিং করার সময় বলেছি, তোমাদের একজন মুখ্যমন্ত্রী এসব কথা আমাকে বলেছে। তখন আমি বলেছি, দুই দেশেরই উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা প্রয়োজন আর সেই স্থিতিশীলতার জন্য শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে।

এবি