‘তিস্তা চুক্তিসহ অমীমাংসিত সব সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে’

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২, ০৪:৫৩ পিএম
‘তিস্তা চুক্তিসহ অমীমাংসিত সব সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে’

বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের মধ্যকার অনেক বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান টেনেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিস্তাসহ অমিমাংসিত যেসব ইস্যু আছে ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তা দ্রুত সমাধান হবে।

মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভারতের হায়দরাবাদ হাউজে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি প্রদানকালে এ কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত ৫৪টি নদী দ্বারা সংযুক্ত ও চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে দুই দেশের মধ্যে। কুশিয়ারার সমস্যার সমাধান হয়েছে। আশা করি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইসহ সব অমীমাংসিত সমস্যারও দ্রুত সমাধান হবে। বাংলাদেশ ও ভারত সম্মিলিত কল্যাণের জন্য সহযোগিতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্ক অন্য দেশের জন্য উদাহরণ।

বাংলাদেশ, ভারত এবং এই অঞ্চলে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে পারলে এটি শুধু দুই দেশের জন্যই নয়, এ অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।

hasina-1

এর আগে বক্তব্য দিতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ আরও জোরদার সম্পর্ক নিয়ে এগিয়ে যাবে। নিজেদের মাঝে অবিশ্বাস তৈরি করে এমন শক্তির বিরুদ্ধে ৭১’এর চেতনায় দুই দেশ কাজ করবে। আমরা এমন কিছু করব না যাতে দুই দেশের ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হয়।

ভারতের সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ আজ ভারতের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার এবং এই অঞ্চলে আমাদের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। জনগণের সহযোগিতায় (সম্পর্কের) ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে।

যৌথ বিবৃতি প্রদানের আগে দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে কুশিয়ারার পানি বণ্টনসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

সমঝোতা স্মারক সেগুলো হলো- কুশিয়ারা নদী থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি উত্তোলনের জন্য সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশ ও ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলের মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক, ভারতের ভোপালের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি ও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশ ও ভারতের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও প্রসার ভারতীর মধ্যে সমঝোতা স্মারক, স্পেস টেকনোলজি বা মহাকাশ প্রযুক্তি খাতে সমঝোতা স্মারক।

hasina-4

ভারতের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হায়দরাবাদ হাউসে বৈঠকে বসেন দুই দেশের সরকারপ্রধান। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।এর আগে সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেন।

এ সময় সাংবাদিকদের সামনে কয়েক মিনিট কথা বলেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে ফলপ্রসু আলোচনা হতে পারে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি বৈঠকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হবে এবং আমাদের মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন করা এবং আমাদের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা- যা আমরা করতে সক্ষম হবো।

লাল গালিচা সংবর্ধনা শেষে প্রধানমন্ত্রী রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান। মহাত্মা গান্ধীর প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা সেখানে রাখা স্মারক বইয়ে সই করেন। এরপর মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি।

বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সভায় এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসারদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’প্রদানের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন।

তাঁর ভারত সফরের প্রথম দিনে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর গতকাল বিকেলে হোটেলের সামিট রুমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এরপর তিনি নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ পরিদর্শন করেন এবং সেখানে নফল নামাজ আদায় ও ফাতেহা পাঠ করেন এবং দেশ ও জাতির এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া কামনা করেন।

পরে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি একই স্থানে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে সন্ধ্যায় ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা ও নৈশভোজে যোগ দেন।

৭ সেপ্টেম্বর, ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি. কিষাণ রেড্ডি এবং নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন।

একই দিনে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে একটি বৈঠক এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসারদের সরাসরি বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার আগে প্রধানমন্ত্রী রাজস্থানের খাজা গরীব নওয়াজ দরগাহ শরীফ, আজমির (আজমির শরীফ দরগাহ) পরিদর্শন করবেন।

এর আগে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকাল ১১ টা ৪০ মিনিটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান।

কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার আগে শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে শেষবার সফর করার পর তিন বছর পর ভারত সফর করছেন।

 

ইএফ