রোহিঙ্গাদের সহজ শর্তে অসুলভ মূল্যে মোবাইল সিম প্রদানের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। সিমের অপব্যবহারের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অপরাধ আরো বেপরোয়া হয়ে যাবে। যা স্থানীয় বাসিন্দা তো বটে, গোটা বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রোহিঙ্গাদের সিম প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতীয় সংগ্রাম কমিটি আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতীয় সংগ্রাম কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মানবতার আড়ালে ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দেওয়ার যে পায়তারা তা সকলেই বুঝি।
কোনভাবেই রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে পাঁচটি করে সিম প্রদান করা যাবে না। আমরা দেখেছি মহিবুল্লাহ এই অবৈধ মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কিভাবে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমাবেশ করেছিল।
এই রোহিঙ্গারা অবৈধ নেটওয়ার্ক সিম ব্যবহার করে মাদক পাচার, অর্থ পাচার, চোরা চালান এবং অসামাজিক কার্যে লিপ্ত হয় হাজারের মতো এইডস রোগী আজ শুধু কক্সবাজার জেলা নয় সারা বাংলাদেশের জন্য আতংক তৈরি করেছে।
তার মানে আমরা অমানবিক এ কথা বলা যাবে না, আমরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ রক্ষার্থে সাবেক ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রী যেভাবে টেলিফোন বুথ তৈরি করে সেখানে গিয়ে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বিনামূল্যে সেটি কেন বন্ধ হল?
সকল সিম উদ্ধার করে সঠিক মালিকদের কাছে সেই সিম বুঝিয়ে দিতে হবে সেই সাথে টেলিফোন বুথের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের অবৈধ কারবারের ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী যে সকল মামলা হামলার শিকার হয়েছে তার যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও উখিয়ার পালংখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা কক্সবাজারের নাগরিকরা আজ মহাবিপদে।
আমাদের আশ্রয় দেওয়ার মানবিক দিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী যে মানবতা দেখিয়েছেন তা যে আমাদের জন্য এত বড় কাল হয়ে দাঁড়াবে তা বুঝতে পারিনি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের পাশাপাশি মায়ানমারের এমটিএমসির টেলিকম নেটওয়ার্ক ও ব্যবহার করে আসছে যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক।
এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে মাঝে মাঝে বিটিআরসির কিছু কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০১৫ সালে সরকার দেশে যখন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে তখন সেই নীতিমালায় বলা হয় বাংলাদেশের কোন বৈধ নাগরিক যার বয়স ১৮ বছর সেই ব্যক্তি জাতীয় পরিচয় পত্র বা তার পাসপোর্ট দিয়ে বায়োামেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করতে পারবে।
অথচ মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা আমাদের দেশের নাগরিকদের নামে ব্যবহৃত সিম অবৈধভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি মায়ানমারের টেলিকম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে দেদারসে। এর মাধ্যমে মায়ানমারে টেলিকম প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও ব্যবসা পরিচালনা করছে।
টেলিকম সেবা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা মায়ানমারে চলে গেছে। কার্যত বর্তমান টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রযয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতার দায় ভার গোচাতে তারা রোহিঙ্গা নাগরিকদের বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাঁচটি করে সিম দেয়াার পাঁয়তারা তৈরি করেছে।
এর মাধ্যমে হয়তো অপারেটরদের মোটা দাগে কিছু ব্যবসা পরিচালনা হবে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে অরাজকতা, সন্ত্রাস মাদক ও এইডস এর মত মহামারী ব্যাপকতা সৃষ্টি করতে পারে। এর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আমার মতামত হচ্ছে সবার আগে অবৈধ নেটওয়ার্ক বন্ধ ও সকল অবৈধ সিম জব্দ করা।
দ্বিতীয়ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্ষণ সংগ্রাম কমিটির সাথে বসে স্থানীয় প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের প্রেক্ষিতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বক্তার আরো বলেন, সকলের হাতে হাতে বাংলাদেশী মোবাইল সিম, লক্ষাধীক রোহিঙ্গা এনআইডি ও পাসপোর্টের আধিকারী এক ভয়াবহ অশনি সংকেত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে ঢুকে পড়েছে। বীরদর্পে মুক্তাকাশে বাংলাদেশের নাগরিকদের মতোই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয়দের বসতভিটায় যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ঠি হচ্ছে, অবাধে কাটছে পাহাড় উজাড় হচ্ছে বন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের এই কঠিন সময়ে আজ বিপন্ন পরিবেশ, মহাসক্কটে অপার সম্ভবনাময় পর্যটন শিল্প, এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থায় ধ্বস নেমেছে।
অবাধে মরণঘাতী নিত্যনতুন মাদকের কারনে যুব সমাজ ধ্বসের মুখে । এমন সময় রোহিঙ্গাদের হাতে মোবাইল ও সিম প্রদান আত্মঘাতী হবে।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মহাসচিব আবদুল্লাহ আল মামুন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আজম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম সবুজ, জননেতা এম মোস্তাক আহমেদ ভাষানী, কক্সবাজার লবণ চাষী সমিতির সভাপতি এ্যড. মো. শাহাবু্িদ্দন, সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক এম এইচ আরমান চৌধুরী, সংগঠনের প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক ছিদ্দিক আহমদ আতিক প্রমুখ।
টিএইচ