স্বপ্নের মেট্রোরেলের লোগো তৈরি করেছেন নওগাঁর কৃতি সন্তান আলী আহসান নিশান। তার এই লগো তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ছয় মাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ থেকে পাস করেন-আলী আহসান নিশান। নিশানের বাড়ি নওগাঁ পৌরসভার ধামকুড়ি এলাকায়। বাবার নাম মৃত আব্দুস কুদ্দুস। তিনি ছিলেন-যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। সৈয়দপুরে রেলের লোকোমোটিভ ওয়ার্কসপের (ইঞ্জিন হল কারখানা) তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতেন নিশানের বাবা।
নিশান বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরিয়েছি। কোনো কাজ নেই। চলতি বছরের শুরুর দিকে একদিন বিভাগের এক শিক্ষকের কাছে যাই। তিনি আমাকে বললেন, মেট্রোরেলের লোগো নির্বাচনের জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। তুমি প্রতিযোগিতায় অংশ নাও। স্যারের আহ্বানে আমি তিনটি লোগো বানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে জমা দিলাম। আরও অনেকেই লোগো বানিয়ে জমা দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো তিনটি লোগোর মধ্যে আমার দুটো এবং অন্যজনের একটি পাঠানো হয়। এরপর জাতীয়ভাবে জমা হওয়া লোগোগুলোর মধ্যে থেকেও শর্টলিস্ট হয়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার লোগোটি চূড়ান্ত করেন।
লোগোর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে উন্নয়নের গতি, সেটা লোগোর দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যাবে। সাধারণত লোগো স্থির প্রকৃতির হয়। এর রঙের ব্যবহারেও এক ধরনের ভারসাম্য রাখা হয় যেন চোখটা আটকে থাকে। কিন্তু এই লোগোতে সেটা ইচ্ছে করেই রাখা হয়নি। এতে এক ধরনের গতি আছে।
প্রতিযোগিতায় নিশানের বানানো লোগো নির্বাচিত হওয়ার পর তা নিয়ে আরও কয়েকবার কাজ করতে হয়েছে বলেও জানান নিশান। তিনি বলেন, এখন লোগোতে থাকা ‘এম’ অক্ষরটি লিখে যে প্লাটফর্ম বোঝানো হয়েছে, প্রথমে তা ছিল না। বিশ্বের ৩৫টি দেশে মেট্রোরেলের লোগোতে ‘এম’ রয়েছে।
ওটাকে যুক্ত করার সময় একটু নতুনত্ব আনা হয়েছে। এ ছাড়া লোগো যখন বানানো শুরু করি, তখন মেট্রোরেল দেখতে কেমন সেটাও জানা ছিল না। তাই প্রথম যে রেলটা ব্যবহার করেছিলাম সেটি দেখতে বুলেট ট্রেনের মতো ছিল। পরে যখন মেট্রোরেলের ইঞ্জিন দেখলাম তখন কিছুটা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।
নিশান আরও বলেন, পুরো কাজ শেষ করতে ছয় মাসের মতো লেগেছে। চলতি বছরের মে মাসে যখন কাজটি শেষ হলো আমি ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম। অনেক প্রতিষ্ঠানে লোগো করেছি, কিন্তু এতটা ভালোলাগা কাজ করেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হওয়ার আনন্দ অবশ্যই অন্য রকম।
মেট্রোরেলের স্টেশনে যে সাইনগুলো থাকবে, সেগুলোও নিশানের করা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাইনের কাজ করতে গিয়ে দেশের সব স্তরের মানুষ যেন চিহ্নগুলো দেখেই বুঝতে পারেন যে, কোনদিকে যেতে হবে, টয়লেট কোনদিকে, টিকিট কোথায় পাবেন; এসব ভাবতে হয়েছে।
মেট্রোরেলের লোগো ও স্টেশনের সাইন বানানোর অনুভূতি প্রকাশ করে নিশান বলেন, দেশের মানুষ যে জিনিসগুলো ব্যবহার করবেন সেখানে যদি আপনার সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে সেটার একটা অন্য রকম অনুভূতি হবেই।
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে দিয়াবাড়ি স্কুলের মাঠে সুধী সমাবেশে মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পর দেশের প্রথম মেট্রোরেলের যাত্রী হতে টিকেট কেটেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা।
এআই