বুয়েট ছাত্র ফারদিন হত্যা

ছেলেকে হারিয়ে ভালো নেই বাবা

মো. সোহাগ বিশ্বাস: প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩, ০৫:০১ পিএম
ছেলেকে হারিয়ে ভালো নেই বাবা

চূড়ন্ত প্রতিবেদন আদালতে

কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, জরাজীর্ণ পোশাক আর পায়ে প্লাটিকের জুতো পরে আদালতের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটছেন মধ্য বয়ষ্ক এক ব্যক্তি।  আদালতের এক এজলাস থেকে অন্য এজলাস আবার এডভোকেটের এক চেম্বার থেকে অন্য চেম্বারে ছুটে চলছেন যে ব্যক্তি তাকে আমরা সবাই চিনি। তিনি ফারদিনের পিতা। হ্যাঁ তিনি নিহত বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী ফারদিনের বাবা। এখন তার চোখে মুখে কেবলই না পাওয়া আর নাভিশ্বাসের ছায়া। পরিবারের বড় ছেলেকে হাড়িয়ে দিশেহারা তিনি। এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি ছেলে হাড়ানোর শোক। পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের বোধহয় এটাই পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। তারওপরে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু সেদিন কাঁদিয়েছিলো পুরো দেশকে। ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে নাকি সে আত্মহত্যা করেছে এটি আদালতের  তদন্তের বিষয়। তবে তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এটা বলাই যায়।

ফারদিন নিহত হয়েছে চার বছর, কেমন আছে তার বাবা? এমন প্রশ্নের উত্তরে ফারদিনের বাবা নুরুদ্দিন বলেন, একজন বাবা তার প্রিয় সন্তানকে হারালে কেমন থাকতে পারে। ফারদিন ছিল আমার পরিবারের সব থেকে বড় ছেলে। ওকে ঘিরেই ছিল আমাদের সব স্বপ্ন। কিন্তু একটা অজানা ঝড় আমাদের সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিল। আমাদের বড় ছেলেকে হাঁড়িয়ে দিশেহারা তার মা।

কান্নাজড়িত কন্ঠে মি.নুর বলেন, আমি আমার এমন সন্তানকে হাড়িয়েছি যে নিজেকে নিজে গড়তে ছিলো, সে খুবই পরিশ্রমী ছিলো, রাষ্ট্রের সম্পদ ছিলো ফারদিন, কেননা সে ডিবেট কাউন্সিলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছিলো। আজ সেই সন্তানকে আমরা হাড়িয়েছি। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আমরা যে তদন্ত সংস্থার উপর আস্থা রেখেছিলাম তারা সেই আস্থা রাখতে পারে নি। তারা শুধু মোবাইল ট্রাকিং দিয়েই শেষ করতে চাচ্ছে। ফারদিন যে সকল জায়গায় গিয়েছিলো সে সকল জায়গার ভিডিও ফুটেজ কোথায়? ধানমন্ডির ওই রেষ্টুরেন্ট থেকে শুরু করে কোন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হচ্ছে না কেন।
নিহত ফারদিনের বাবা বলেন, তারা বলছে ফারদিন দারিদ্রতার কারনে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু ফারদিনের কোন হতাশা ছিলো না, এমনকি কোন দারিদ্রতাও ছিল না। সে উদ্ভাসে শিক্ষকতা করতো, একজন বুয়েটের ছাত্র চাইলেই মাসে লাখ টাকা উপার্জন করতে পারে তাই দারিদ্রতার প্রশ্নই আসে না। 

ফারদিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

দেশের সবথেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েটের ছাত্র ছিল ফারদিন অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ধরনের  সহযোগিতা না পাওয়ারও আক্ষেপ করেন এই বাবা।

তিনি বলেন, আমার ছেলেটাকে হত্যা করা হলো কিন্তু বুয়েট কর্তৃপক্ষ কোন শোক পর্যন্ত জানালো না। আমি সত্যই হতাশ। 
ছেলেকে হাড়িয়ে নুর উদ্দিনের পরিবার পরেছেন অর্থকষ্টে, পরিবারের খরচ মিটিয়ে ছেলের জন্য মামলা চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে এই বাবার জন্য। তাই মামলার এই পর্যায়ে এসে উকিলও পরিবর্তন করতে হয়েছে তাকে। তবুও ন্যায় বিচারের জন্য শেষ পর্যন্ত নড়তে চান ফারদিনের বাবা।

ফারদিনের মেঝভাই কুমিল্লার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, বড় ভাইকে হারিয়ে এখনো নিশ্চুপ তিনি। অবিভাবকের মত যে ভাই সব সময় আগলে রাখত তাকে আজ সে নেই এটা ভাবলেই চোখে জল আসে বলছিলেন ফারদিনের মেঝ ভাই। 
এদিকে ডিবির পক্ষ থেকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। 

ফারদিনের বাবা বলছেন ডিবি যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে ফারদিন আত্মহত্যা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছি। এমনকি সেখানে ফারদিনের বান্ধুবী বুশরার অব্যহিত চাওয়া হয়েছে। আদালত শুনানির জন্য ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত দিন ধার্য করেছে।

অন্যদিকে বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৪) হত্যা মামলায় বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার স্থায়ী জামিন দিয়েছে আদালত। গত ১৬ মার্চ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালতে বুশরার আইনজীবী স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার স্থায়ী জামিন মঞ্জুর করেন।

উল্লেখ্য যে গতবছর ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর ৭ নভেম্বর  নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বুয়েটছাত্র ফারদিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে হত্যাকাণ্ডের স্থান এবং সময় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেলেও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না কেউ। এর পর থেকেই আইনশৃংখলা বাহিনী এটিকে আত্মহত্যা বললেও ফারদিনের বাবা শুরু থেকেই বলে আসছে তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

আরএস