‘শপথ নিই, আমরা চিকিৎসকরা কখনো কোন কমিশন নেবো না’

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৩, ০৬:৫৯ পিএম
‘শপথ নিই, আমরা চিকিৎসকরা কখনো কোন কমিশন নেবো না’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‍‍`কমিউনিকেশন স্কিল এন্ড ডক্টর পেশেন্ট রিলেশনশিপ (চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে যোগাযোগ বিষয়ক দক্ষতা)‍‍` শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার সকালে (১৩ আগস্ট ২০২৩ খ্রী.) বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটি।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের মত করে যদি সারাদেশে রোগীকে কনসালটেন্সি করা যেত তাহলে রোগী ও তার স্বজনদের কোন অভিযোগ থাকত না। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৩ ঘণ্টায় ২০ জনের বেশী রোগী দেখা হয় না এবং রোগী প্রতি চিকিৎসকে কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় ব্যয় করতে হয়।  হাসি মুখে রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।

রোগী কেমন আছেন,  কি চায়, কি সমস্যা নিয়ে আসছে এসব বিষয় চিকিৎসককে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসককে রোগীর মূল সমস্যা কি তা জানার জন্য একাধিকবার প্রশ্ন করা যেতে পারে। রোগীকে তার কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। রোগী যদি একই কথা বার বার বা ঘুড়িয়ে পেচিয়ে বলে, তবে এর মধ্য দিয়েও একজন চিকিৎসক মূল সমস্যাটি বের করতে পারবেন।  কোন কোন রোগী চিকিৎসককের কাছে আসেন যাদের কোন পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না ।  চিকিৎসকরাও এক্ষত্রে পরীক্ষা নিরীক্ষা দেন না। কিন্তু কিছু কিছু রোগী পরীক্ষা নিরীক্ষা না লেখার কারণে চিকিৎসকের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়। যেসকল ইনভেস্টিগেশন প্রয়োজন নাই, সেটি আমরা কোন অনুরোধেও দেব না।

উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন বলেন, চোখের চিকিৎসকদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসার সুযোগ কম হয়। কারণ চোখের চিকিৎসায় পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রয়োজন কম হয়, এজন্য চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা কম দেন। কমিশন সকল চিকিৎসক নেন না। অল্পকিছু চিকিৎসক কমিশন গ্রহণ করতে পারে। যার ফলে সকল চিকিৎসকের বদনাম হয়।  আমরা চিকিৎসকরা কখনো কোন কমিশন নেবো না, আসুন আজ থেকে শপথ গ্রহণ করি।

তিনি বলেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালের মত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়ানোর জন্য হাসপাতালের সকল কাগজপত্র আপডেট রাখা প্রয়োজন। যে রোগী যে চিকিৎসকের কাছে আসেন, সেই চিকিৎসককেই আগত রোগীকে দেখতে।  রোগীর কাক্সিক্ষত চিকিৎসক না থাকলে সেটিও ভর্তি রোগীকে অবহিত করা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যদি  রোগীর প্রতি ভাল ব্যবহার করি, রোগীর সহানুভূতিশীল ও সহমর্মিতা প্রকাশ করতে পারি, আমরা যদি চিকিৎসকের মহৎ পেশাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে আমাদেরকে আরও ভাল হতে হবে। রোগীর সেবায় রোগীকে আমাদের (চিকিৎসক) পরিবারের সদস্যের মত  ভেবে সেবা করতে হবে। তাহলে কোন রোগী বলবে না যে, আমরা তাদেরকে ঠিক মত দেখি না। সততা, ডিসিপ্লিন, টাইম মেইনটেনিং আমাদের জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।  চিকিৎসকদের সময়ানুবর্তিতা মেনে চলার আহ্বানও জানান তিনি।

সেমিনারে কি নোট স্পিকার হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও মাননীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, এমপি একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন,  আগে রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে এসে বলত, উপরে আল্লাহ্ আর নিচে আপনি (চিকিৎসক)। অর্থাৎ চিকিৎসকদের প্রতি রোগীরা ছিলেন আস্থাশীল। কিন্তু বর্তমানে আমরা চিকিৎসকরা সে জায়গা থেকে অনেক দূরে সরে আসছি। এটি শুধু আমাদের (চিকিৎসক) ভুল নয়। বর্তমানে রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে  যা কিছু প্রত্যাশা করেন  তা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে সহযোগীতা না করলে চিকিৎসকরা কখনোই পূরণ করতে পারবেন না।

অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, চিকিৎসকদের মনে রাখতে হবে, চিকিৎসকরা মানবসেবায় নিবেদিত। প্রকৃত চিকিৎসকদের কোন অফিস টাইম নাই। যতক্ষণ সম্ভব রোগীদেরকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। রোগীর সেবার সময় চিকিৎসককে সকল ধরণের নীতি অবলম্বন করতে হবে। রোগীর প্রাইভেসি মেইন্টেইন করাও একজন চিকিৎসককের বড় দায়িত্ব।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ,  উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন)  অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী।

সেমিনারে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক,  কনসালটেন্ট, চিকিৎসক  ও রেসিডেন্টগণ উপস্থিত ছিলেন।  অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মনোরোগবিদ্যা বিভাগরে সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা জোহরা।

এআরএস