আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না আন্দোলনকারীরা
আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে সরকার— প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর
দ্রুত সিদ্ধান্ত না আসলে সারাদেশ থেকে ঢাকা মার্চের হুঁশিয়ারি নাহিদের
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ মোড়। যে আন্দোলন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
গতকাল শুক্রবার বিকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পার্শ্ববর্তী সড়ক থেকে সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই অবরোধে যেন ফিরে এসেছে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের উত্তাল দিনগুলো, যা ‘জুলাই আন্দোলন’ নামে পরিচিত।
এ সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফিসহ এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বিকাল সাড়ে চারটার পর থেকেই জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ছাত্র-জনতা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিতে শুরু করেন। তাদের কণ্ঠে ছিল আওয়ামী লীগ বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান।
তার মধ্যে ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘দিল্লি না, ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘গোলামি না আজাদী, আজাদী আজাদী’ ‘নাহিদ, আক্তার আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘একটা একটা ছাত্রলীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও ঘুরিয়ে দাও’, ‘২৪ বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, প্রভৃতি বলে স্লোগান দেয়া হয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের হাতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে লেখা প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন।
এদিকে অবরোধের ফলে শাহবাগের চারপাশের রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সায়েন্সল্যাব, টিএসসি এবং বাংলামোটরের দিকে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে- বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
গতকাল এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানায়, সমপ্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এ বিষয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে। সে পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানাচ্ছে সরকার।
এরআগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। রাত গড়িয়ে গতকাল সারাদিনও আন্দোলনে মুখর থাকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা। জুমার নামাজের পরও সরকারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। এরপর থেকেই শাহবাগে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্যোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পার্শ্ববর্তী সড়কে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশ শেষে এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে আন্দোলনকারীরা।
এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত না আসলে সমগ্র বাংলাদেশ আবারও ঢাকা শহরে মার্চ করবে বলে জানিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গতকাল রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, শাহবাগের অবস্থান চলমান থাকবে। দলমত নির্বিশেষে আওয়ামী লীগ ও দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে জুলাইয়ের সকল শক্তি এক থাকবে এটাই প্রত্যাশা। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্লকেড চালু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না আসলে সমগ্র বাংলাদেশ আবারও ঢাকা শহরে মার্চ করবে।
তিনি আরো বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী, জুলাই বিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী, ইসলাম বিরোধী, নারী বিরোধী, মানবতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী মুজিববাদী সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণে বাংলাদেশপন্থি সব শক্তি ঐক্যবদ্ধ হই।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ থেকে জন্ম নেয়া ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজনৈতিক পালাবদলের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। তবে সময় গড়াতেই আবারও সরব হয়ে ওঠে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠন। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ব্যবস্থাপনা চললেও, আওয়ামী লীগের ‘সাংগঠনিক অপরাধ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা্লের’ অভিযোগ তুলে এবার দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজপথে নেমেছে এনসিপিসহ বিভিন্ন সংগঠন। ৯ মাস আগের আন্দোলনের সূত্র ধরে নতুন করে গতি পেয়েছে এই প্রতিবাদ, যা রাজধানীর রাজপথে ফের চাঙ্গা করেছে রাজনৈতিক উত্তাপ।