বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে ‘সর্বস্বান্ত’ সোনিয়া, সন্তানসহ পথে

খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ০৬:০৪ পিএম
বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে ‘সর্বস্বান্ত’ সোনিয়া, সন্তানসহ পথে

বিদেশে গিয়ে সংসারের হাল ধরবেন—এই আশায় দালালের পেছনে ছুটেছিলেন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গোপগ্রাম ইউনিয়নের সোনিয়া খাতুন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ বিষাদে পরিণত। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তিনি হারিয়েছেন ছয় লাখ টাকার বেশি। শুধু তাই নয়, প্রতারণার পর সংসার ভেঙে গেছে, তালাক দিয়েছেন স্বামী। প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে এখন সোনিয়ার দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে।

ভুক্তভোগী সোনিয়ার মা ঝর্ণা খাতুন বলেন, প্রায় দুই বছর আগে স্থানীয় ছামিরা খাতুন, তাঁর বাবা ছামেদ প্রামানিক ও চাচা সোলেমান প্রামানিক বিদেশে পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে মোট ছয় লাখ টাকার বেশি আদায় করেন। প্রথমে পাসপোর্ট, মেডিকেল ও প্রক্রিয়াগত নানা খরচের কথা বলে ৭০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। পরে ধাপে ধাপে আরও টাকা আদায় করেন তাঁরা। এসব টাকার চেক ও রশিদসহ প্রমাণপত্র সোনিয়া সংরক্ষণ করেছেন বলে জানান তাঁর পরিবার।

তবে টাকা নেওয়ার পর বিদেশ পাঠানোর কোনো উদ্যোগ না নিয়ে প্রতারক চক্র সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে স্বামী সোনিয়াকে তালাক দেন। সোনিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন সন্তান নিয়ে কোথায় যাব, কী খাব—এই দুশ্চিন্তায় আছি। থানায়, গ্রাম্য সালিশে, এমনকি আদালতেও গেছি, কেউ বিচার দেয়নি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ ও থানায় অভিযোগ হলেও প্রতিকার মেলেনি। অভিযুক্ত সোলেমান প্রামানিক বলেন, ‘আমি ৩ লাখ টাকা নিয়েছি, তবে আমার ভাইপো ছামিরাকে সন্ত্রাসীরা চাপ দিয়ে টাকা আদায় করে নিয়েছে। ওই টাকা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শিবলী আহমেদের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।’

তবে শিবলী আহমেদ বলেন, ‘আমি একবার ২ লাখ টাকার সমঝোতা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভুক্তভোগী সম্পূর্ণ টাকা ফেরতের দাবি করায় সমাধান হয়নি।’

গোপগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিউদ্দিন শফি বলেন, ‘ঘটনাটি আমি জানি। একাধিকবার সালিশও হয়েছে। সোনিয়া এখনো টাকা পাননি। কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বিষয়টি আটকে রেখেছেন।’

খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগী থানায় এসেছিলেন। আমি তাঁদের আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’

সোনিয়ার পরিবারের দাবি, অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে তাঁদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হোক।

বিআরইউ